নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদেরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
সংলাপ দুইদিক থেকে নাকচ হওয়ায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তার (প্রধানমন্ত্রী) আগে সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, নির্বাচনে যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে আওয়ামী লীগ দায়ী থাকবে। আমরা আর ছাড় দেব না। দেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমার কথা বলছি না। চলেন না বেরুই এক সাথে। দ্যট গো-আউট। টক টু দ্য পিপলস, ফারমার্স, রিকসাপুলার্স। নিরপেক্ষভাবে চলেন, আপনি ইনভেস্টিগেশন করেন- দেখবেন মানুষ কী বলে। পিপল ওয়ান্ট এ চেঞ্জ। দিস ইজ ট্রুথ।’
গণমাধ্যমের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন। চিন্তা করেন এরশাদের পতনের কথা। পত্রিকা বন্ধ করে দিলেন আপনারা। তারপরে সেটা অনেক এগিয়ে গেল। আমরা সব মানুষ কি চাটুকার হয়ে যাব, সব মানুষ কি স্বার্থপর হয়ে যাবে, সব মানুষ কি আমরা নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই দেখব না? সেলফ সেন্সরশিপ করতেই থাকব? আমরা তো মরে যাব কয়েকদিন পর। দিস ইজ ইউর কান্ট্রি— এটা মনে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দাম্ভিকতার বর্হিপ্রকাশ ঘটেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাল আমাদের অনির্বাচিত স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী, দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নো প্রেসার উইল ওয়ার্ক অন মি। তার ওপর কোনো চাপই কাজ করবে না। এখানেই বোঝা যায় তার (প্রধানমন্ত্রীর উক্তিতে) এদেশের প্রতি, মানুষের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই।’
চাপ কেন পড়ছে? ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘এর কারণ হচ্ছে, গত দুইটা নির্বাচন তারা করেছেন সম্পূর্ণ একতরফাভাবে। যত রকমের ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, সন্ত্রাস করেছে। এছাড়া ভোটারদের ভোট দিতে যেতে বাধা দিয়ে ভোট কেন্দ্র শূন্য করে, ফলাফল ঘোষণা করে বেআইনিভাবে ক্ষমতায় গেছেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংলাপের ফল কি? আমাদেরও প্রশ্ন ওয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে আসুক তিনি আমাদের সকলের সামনে মিটিংয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ কোনো মামলা দেবে না, কাউকে গ্রেফতার করা হবে না নির্বাচন পর্যন্ত।’
তার বক্তব্যের তিন দিন পর থেকে সারাদেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমি আমার এলাকায় প্রথম গিয়ে ঢুকেছি। আমি যে এলাকায় গেছি সেখানে আমার গাড়ির ওপর আক্রমণ হয়েছে, আমার কনভয়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। নির্বাচনের ৭/৮ দিন আগ থেকে সেখানে নতুন নতুন প্লট তৈরি করা হয়েছে। তারা (ক্ষমতাসীনরা) যে নির্বাচনি অফিস তৈরি করেছিল সেগুলো তারা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। মোটরসাইকেল পুড়িয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু আমার এলাকায় নয়, সারাদেশে সব জায়গায় করা হয়েছে। এসবের পরও আজকে যদি শেখ হাসিনা বলেন, ওয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। রেজাল্ট তো ইউ নো ওয়াট হেড ইউ ডান।’
বিএনপি শুধু নয়, কেউ নির্বাচনে যাবে না? এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারপরে কি করে উনি (প্রধানমন্ত্রী) আশা করেন- তিনি সরকারে থাকবেন আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। একা বিএনপি তো নয়, আজ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো কেন বলছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাব না?’ এমনকি সিপিবি পর্যন্ত বলেছে যে, নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।’
‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) চূড়ান্তভাবে সত্যের অপলাপ করেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। তিনি একটা প্রচণ্ডরকম দাম্ভিকতায় ভুগছেন। তিনি গণতন্ত্রের যে ব্যাসিক কথা সেই ব্যাসিক কথাগুলো থেকে বাইরে চলে যাচ্ছেন’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।