নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশ রোধে কাজ করছে বিজিবি
‘নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রবেশ রোধে কাজ করছে বিজিবি’ বিজিবি’র ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে মহাপরিচালক
৫ ডিসেম্বর ২০২৩, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান বিএএম, এনডিসি, পিএসসি বলেছেন, সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সীমান্ত সুরক্ষা ও অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা রক্ষার জন্য যাতে অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশে প্রবেশ করে আইন শৃঙ্খলা নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষনিক বিজিবির অধিকাংশ সদস্য হাজির থেকে নিরাপত্তা জোরদার করছেন।
বিশেষ সতর্কতার অংশ হিসেবে বর্তমানে সারা দেশে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই’শ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কাজ করছে। এছাড়া মায়ানমারে অভ্যন্তরীন বিভিন্ন গোষ্টির মধ্যে সংঘর্ষ হচ্ছে, এর জেরে যাতে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে আগের তুলনায় বিজিবি অনেক বেশি সতর্ক রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের বায়তুল ইজ্জতস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজিবি’র ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজিবি মহাপরিচালক সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিজিবি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-গোলাবারুদের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। রিক্রুটিং ব্যবস্থা এনালগ থেকে ডিজিটালে পরিণত করার পাশাপাশি সার্বিক জায়গায় ডিজিটাল করা হয়েছে। যাতে বিজিবির সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয়। এছাড়া বিজিবি ২৪ঘণ্টা ও ৩৬৫দিন ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ৪হাজার ৪৮৭বর্গকিলোমিটার এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। নবীন সৈনিক যোগদানে বাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা নতুন উদ্দীপনা ও দেশের প্রতি মমত্ববোধ নিয়ে কাজ করবে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি। নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
মহাপরিচালক ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআরের তৃতীয় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। মহাপরিচালক ১০০ তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারী ইমরান হোসেন সুয়েব, সর্ববিষয়ে দ্বিতীয় ও শারীরিক উৎকর্ষতায় (মহিলা) প্রথম স্থান অধিকারী খাদিজা খাতুন, ফায়ারিং-এ শ্রেষ্ঠ রিক্রুট উজ্জল হোসেন শারীরিক উৎকর্ষতায় (পুরুষ) প্রথম স্থান অধিকারী জনি হোসেন এর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল মহাপরিচালককে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। পরিশেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১০০তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ চলতি বছরের গত ১৮ জুন বিজিটিসিএন্ডসিতে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৮২ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫৪৪ জন পুরুষ এবং ৩৮ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।
অনুষ্ঠানে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।