ইরানে প্রতিবছর ২১ই ডিসেম্বর জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয় বছরের দীর্ঘতম রাত ‘শাবে ইয়ালদা’।
২২ডিসেম্বর, শুক্রবার
আন্তর্জাতিক – শেখ মঈনুল আজাদ
ইরানি পরিবার ও বন্ধুদের একত্রে কিছু মূল্যবান সময় কাটানোর একটি সোনালি রাত হিসেবে এটি পালিত হয়। এদিন দেশটিতে সবাই মিলে ধুমধাম করে বছরের দীর্ঘতম রাত উদযাপন করে।‘শাবে ইয়ালদা’ ঘিরে ইরানে রয়েছে বেশ কিছু সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।শাবে ইয়ালদার ভোজ ‘শাব-ই চেল্লেহ’ নামে পরিচিত।
আক্ষরিকভাবে যার অর্থ চল্লিশের রাত। অর্থাৎ ‘শাব-ই চেল্লেহ’ বলতে শীতকালের প্রথম চল্লিশ দিনকে বোঝায়। শীতের এই দিনগুলো সাধারণত সবচেয়ে শীতলতম ও কঠিন হয়ে থাকে।প্রাচীন ফারসি ক্যালেন্ডারে শীতকাল দুভাগে বিভক্ত। ‘চেল্লেহ বোজোরগ’ ২২ ডিসেম্বর থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। যার আক্ষরিক অর্থ বড় চল্লিশ। আর ‘চেল্লেহ কুচাক’ ৩০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১০ মার্চ পর্যন্ত। যার অর্থ ছোট চল্লিশ।শীতের দীর্ঘতম এই রাতে পরিবারগুলো সমবেত হয়ে কবিতা এবং উৎসবে মেতে ওঠে। সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী তরতাজা ফলমূলের সমাহার তো রয়েছেই। করুণাময় এই রাতে ফারসিদের কাছে শীতকালীন শীতলতা যেন পরাজিত হয়। ভালোবাসার উষ্ণতা গোটা পরিবারকে আলিঙ্গন করে।
আত্মাগুলো একে অপরের আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়ে ভালোবাসা বিনিময়ে মেতে ওঠে।২১ই ডিসেম্বরের এই রাতে বিদেশে বসবাসরত ইরানি নাগরিকদের জন্য রয়েছে চমতকার কিছু সুযোগ। তারা এদিন বিভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির মানুষদের কাছে নিজেদের অসাধারণ ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। প্রথা ও রীতিনীতি ভাগাভাগি করার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ পায়। যা আন্তঃসংযুক্তির এই বিশ্বে পারস্পরিক উত্তম বোঝাপড়ার পথ প্রশস্ত করে।ইরানের ব্যস্ততম রাস্তায় উঁকি দিলে দেখা যায় মুদি ও কনফেকশনারি দোকানগুলো যেন মহাউৎসবে মেতে উঠেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার-দাবার কিনে মজা উপভোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাতে উষ্ণ খাবার শেষে অনেকে কবিতা, গল্প ও বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে অসাধারণ মুহূর্ত কাটায়।
মধ্যরাত পর্যন্ত এই উৎসব চলতে থাকে।ইয়ালদা রাতে মূলত শীতের সূচনা উদযাপন করা হয়। একই সাথে দিন বাড়তে থাকায় সূর্যের আধিপত্য বিস্তার হতে থাকে। ইয়ালদা শব্দের অর্থ সূচনা বা জন্ম। ইয়ালদা সরকারি কোনো ছুটির দিন না হলেও এখনও প্রাচীন কিছু ঐতিহ্যকে ছাপিয়ে যায় উৎসবটি। এই রাতে টেলিভিশনে বিশেষ প্রোগ্রাম সম্প্রচার করা হয়।
সূত্র- niafam.com
দীর্ঘদিন যাবত ইরানে বসবাসরত জনাব আবু সালেহ সাহেব জানান ; এক ইরানীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বছরের দীর্ঘতম রাত ঠিক আছে কিন্তু সারারাত জেগে থাকতে হবে কেন? সে উত্তরে জানিয়েছিলো, রাত দীর্ঘ হওয়ায় আগে চোরের উপদ্রব বেশী হতো তাই সবাই সারারাত জেগে থাকতেন। পরিবারের বড়রা গল্প বলতেন, হাফিজের কবিতা আবৃত্তি করতেন… এভাবেই রাত জাগার প্রথাটা চালু হয়।