বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে যা হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে: রাইট টু ফ্রিডমের বিবৃতিতে অ্যাম্বাসেডর মাইলাম

আন্তর্জাতিক ; শেখ মঈনুল আজাদ

ডিসেম্বর ৩০,২০২৩ইং

নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন হাতে রেখে বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে পরিকল্পিত উপায়ে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে সেটার জন্য তাদের মূল্য পরিশোধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছে ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডম।

বৃহস্পতিবার সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৩ সালের শুরু থেকে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করা অধিকার কর্মীদের সমর্থন যুগানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আসন্ন অর্থনৈতিক সংকটের দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছে রাইট টু ফ্রিডম। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন হাতে রেখে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে পরিকল্পিত উপায়ে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে সেটার জন্য তাদের পরিণাম ভোগ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক অংশীদারদের সরকারকে এটা সাধারণ ভাষায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া উচিত যে, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায়না।

বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগিতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা, বাণিজ্যিক এবং কূটনৈতিক সম্পর্কসহ সব ধরনের সম্পর্ক পুর্নবিবেচনা করতে বাইডেন প্রশাসন এবং কংগ্রেসের প্রতি আহবান জানিয়েছে রাইট টু ফ্রিডম।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর করলে তা বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে একটি বার্তা পৌঁছে দেবে যে, যুক্তরাষ্ট্র যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তৎপর রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অধিকার বাস্তবায়নে যারা সংগ্রাম করছে তাদের জন্যও এটি বার্তা হিসেবে কাজ করবে।

বিবৃতির শুরুতেই বাংলাদেশের একতরফা এবং প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যেভাবে জালিয়াতির নির্বাচন করেছে সেই বিষয়কে সামনে রেখে বিগত মাসগুলোতে ২০২৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া সংকটের বিষয়ে উদ্বেগের কথা বার বার জানিয়ে আসছে বাংলাদেশের মিত্র দেশগুলো। বিগত দুই নির্বাচনে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো।

এতে বলা হয়, সংকটের বিষয়টি এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। কারণ হাজার হাজার বিরোধীদলের কর্মীকে জেলে আটক রেখে এবং নিজেদের পছন্দমতো নির্বাচনী প্রার্থী বাছাই করে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে সরকার। এরকমের একটা পরিবেশ তৈরি করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এবং তার দল পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভ এবং ভিন্ন মতের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং মিডিয়া সাফ এ কথা বলছে যে, বাংলাদেশের চলমান এই পরিবেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ সক্রিয় ভূমিকার রাখেনি। তারা অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহবান জানিয়ে শুধু বিবৃতি দিয়েছে কিন্তু শেখ হাসিনাকে এর জন্য বাধ্য করতে পারেনি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করায় অভিযুক্ত কিছু বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এইসব পদক্ষেপ দেশটি গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। এদিকে, দেশের ভিতরে এবং বাইরে সমালোচনা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে চীন, রাশিয়া এবং ভারত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button