ঘরে ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া, বন্দীদশাতেই কেটে গেল ৭ বছর

টানা ৭ বছর কারাভোগ-বন্দীদশা শেষে ঘরে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আলোচিত মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বন্দীদশা শুরু হয় তার। অতঃপর, বুধবার (২১ আগস্ট, ২০২৪) মুক্তি পেয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে তার বাসায় ফেরার তথ্য নিশ্চিত করেন মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি জানান, খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের কেবিনে আছেন। সন্ধ্যায় তিনি বাসায় ফিরবেন।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, বন্দীদশাতেই কেটে গেল বেগম খালেদা জিয়ার ৭টি বছর। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত খালেদা জিয়াকে ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন। পরে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে বন্দী করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অসুস্থ হলেও খালেদা জিয়াকে আটক অবস্থায় দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে।

এদিকে, একই ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরনো ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে শেষ হওয়া ‘জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট’ দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হয়। এর প্রায় ১৮ মাস পর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের চুড়ান্ত শুনানি শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আবেদনটি খারিজ করে দেয়। খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন খারিজ করা হয় তার নামে থাকা আরেকটি আলোচিত মামলা যেখানে ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ নামের প্রতিষ্ঠানে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। এরপর থেকেই দলের সিনিয়র নেতারা প্রতিবাদ সভা করে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করে আসছেন। তারা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন এবং বিগত নির্বাচনের সমালোচনা করেন। তারা নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে তাদের ভাষায় লড়াই করার আহ্বান জানান। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয়নি।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর মুক্তি মিলেছে খালেদা জিয়ার।

জানা যায়, ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন। তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ আটক হন। ওই সময় কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৭ সালে খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন যা ‘নাইকো দুর্নীতি মামলা’ নামে পরিচিত। এছাড়াও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।

উল্লেখ্য যে, ২০০৪ সালে স্বনামধন্য ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় বেগম জিয়ার অবস্থান ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম, ও ২০০৬ সালে বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীর তালিকায় ৩৩তম ছিলেন।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button