পানি বাড়ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, সারাদেশে ভারী বৃষ্টির আভাস

বন্যায় ফেনীর প্রায় ২০০ গ্রাম প্লাবিত, ফলে দুই লাখ মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের সিলেট জেলার বেশ কয়েকটি নদীর পানি বাড়ছে। বিপদ সীমানার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীর পানি। এদিকে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। পরিস্থিতি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

বুধবার (২১ আগস্ট) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এদিন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এ সকল নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, এসময় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল কতিপয় পয়েন্টে সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে।

আরো বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই, ধলাই নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানিয়েছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে, এ সময় এ অঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহরি ও গোমতী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সমতল সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেণী ও চট্টগ্রাম জেলার মুহরী ও হালদা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আর একইসময়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লা জেলার গোমতী নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

এ পরিস্থিতিতে নোয়াখালী, ফেনীসহ যেসকল জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বুধবার (২১ আগস্ট) ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকার অবস্থানরত লঘুচাপটি গুরুত্বহীন হয়ে মৌসুমী বায়ুর অক্ষের সাথে মিলিত হয়েছে। মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিয়ায়, পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এছাড়া শুক্রবারও ( ২৩ আগস্ট) ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় একা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। ওইদিনও সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আর বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা বলছে, এই সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে।

বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকা, ফরিদপুর, টাংগাইল, ময়মনসিংহ এবং সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

তবে সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। যে কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button