৮ জেলার ৩৫৭ ইউনিয়নে পানিবন্দি সাড়ে ৪ লাখ পরিবার, ৩ জনের মৃত্যু
ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় দেশের আট জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য বলছে, বন্যা ছড়িয়ে পড়েছে অন্তত ৩৫৭টি ইউনিয়নে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ পরিবারের ২৯ লাখ মানুষ। বন্যায় অন্তত তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আশ্রয় দিতে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
প্রবল বর্ষণ আর উজানের ঢলে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) থেকে দেশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত বন্যা ছড়িয়েছে আট জেলায়— ফেনী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার অনেক নিম্নাঞ্চলই জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কক্সবাজারে একজন করে মোট তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বলেন, আট জেলার ৫০ উপজেলায় ৩৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে চার লাখ ৪০ হাজার ৮৪০ পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২৯ লাখ চার হাজার ৯৬৪ জন।
সবশেষ তথ্য বলছে, বন্যাদুর্গত এলাকায় এক হাজার ৫৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন মানুষ ছাড়াও সাত হাজার ৪৫৯টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আট জেলার দুর্গতদের চিকিৎসা সেবা দিতে ৪৪৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলো এক কোটি ৮২ লাখ নগদ টাকা ও ১৩ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ১১ হাজার প্যাকেট শুকনো ও অন্যান্য খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুত রয়েছে।
এদিকে বুধবার থেকেই বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়েছে। তাদের সেঙ্গ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও কাজ করছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২৬০ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে তারা। এর মধ্যে দুজন অন্তঃসত্ত্বাসহ ৯৯ নারী ও ২২টি শিশুও রয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতিতে কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় মনিটরিং সেলে জরুরি এক সভা করে অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে। পরে সকাল ১১টায় অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরও একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব সভার পর চট্টগ্রাম থেকে বিভাগীয় উপপরিচালকের নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের একটি দল এবং ঢাকা ও বরিশাল থেকে ১০ সদস্যের আরও তিনটি উদ্ধারকারী দল ফেনীসহ বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হয়।
এদিকে বন্যায় বিভিন্ন এলাকায় রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। চট্টগ্রাম থেকেও সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের ঈদগাঁও ও রামু উপজেলা প্লাবিত হলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। বন্যায় রামুতে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত দুজন।