পাহাড়ের সংকট : শুরু ও শেষ 

মতামত:

পাহাড়ের সংকটের এর সংকটসমূহের হঠাৎ করে উদ্ভব হয়নি। এক দীর্ঘ ঐতিহাসিক বাস্তবতার ধারাবাহিকতায় এই সংকট আজকের দিন অব্দি এসে গড়িয়েছে। এ নিয়ে আহমেদ ছফা লিখেছেন :  ঐতিহাসিক ধারাক্রম অনুসারে রণরক্ত-সফলতার মধ্য দিয়ে শক্তিমান জনগোষ্ঠীর মার খেয়ে দূর্বল মানবগোষ্ঠী পালিয়ে গিয়ে কোনো রকমে আত্মরক্ষা করেছে- এই হলো পার্বত্য চট্টগ্রমের পাহাড়ি অধিবাসীদের ভাগ্য। পাহাড়ের সংকট এবং স্থায়ী সমাধান বিষয়ক আলোচনা করতে হলে কোনো আমাদের মস্তিষ্ককে পক্ষ না নিয়ে চিন্তা করাতে হবে।

 

রাখাইন রাজার কাছে পরাজয়ের কারণে ১৩ শতকের গোড়ার দিকে মুঘল ও বাঙালি জনগণের বসতি স্থাপনের আগে চাকমারা আরাকান থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপন করে। তার আগে জায়গাটি ছিল আরাকান, চাকমা রাজ্য এবং টুইপ্রা রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র। পরে মারমা, ত ঙ্গ্যা, বাঙালিসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর লোকেরাও এখানে বসতি গড়ে। মুঘলদের সাথে চাকমাদের রাজার কয়েকবার যুদ্ধ হয়। শেষে চাকমা রাজা মুঘলদের তুলা দিতে রাজি হন। তাই, মুঘল ও প্রথম দিকের ব্রিটিশ রেকর্ডে এই অঞ্চলের নাম কার্পাস মহল বা তুলা মহল। ব্রিটিশ শাসনামলে চাকমাদের দমন করার জন্য পার্বত্য অঞ্চলকে ৩টি সার্কেলে ভাগ করা হয়। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রামকে বর্ধিত করে পূর্বদিকে সম্প্রসারিত করা হয় এবং পার্বত্য অঞ্চল এর মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতের অধিভূক্ত হয়। দেশভাগের পর চট্টগ্রামের অংশ হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলও পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়।

 

পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ওপর শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যে অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ চালানো হয়েছে তাই-ই সেখানকার জনগোষ্ঠীকে বিদ্রোহের পথে ধাবিত করে নিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক নিষ্পেষণ জাতিগত নিষ্পেষণের জন্ম দিয়েছে, জাতিগত নিষ্পেষণ সাংস্কৃতিক নিষ্পেষণের পথ প্রশস্ত করেছে। তবে, কিছু কিছু ঘটনা পাহাড়ে ঐতিহাসিক বাস্তবতার জন্ম দেয়। 

 

তার মধ্যে প্রথমটি হলো কাপ্তাই বাঁধ। কাপ্তাই বাঁধ তৈরির শুরু থেকেই এম এন লারমাসহ আদিবাসী নেতারা বাঁধ নির্মাণের পরিণতির ভয়াবহতা আগাম অনুভব করতে পেরে এর যৌক্তিক বিরোধিতা করেছিলেন, কিন্তু তাদের মতামতের তোয়াক্কা করা হয়নি। তৎকালীন সরকার এর মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন হবে বলে তাদের বাঁধ নির্মাণের পরে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছিল। 

 

বাঁধ নির্মাণের পর বিশাল এলাকা প্লাবিত হবে জানিয়ে তখন অনেক পরিবেশবিদ বর্তমান বাঁধের আরো উজানে বিকল্প একটি স্থান বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবিত সেই স্থানটি ভারতের সীমান্তরেখার কাছাকাছি হওয়ায় রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কথা ভেবেই তা বাদ দেওয়া হয়েছিল। অথচ ভারতের সরকার বাঁধের রাজনীতি ও আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা নিয়ে কতটুকু সংবেদনশীল তা আজ আমাদের সবার জানা। 

 

আজ যে সুবিশাল কাপ্তাই হৃদ আমরা দেখতে পাই, সেই লেকের নিচে রয়েছে আস্ত একটা শহর। ১ লক্ষ মানুষ সেসময় ঘর হারিয়েছিল, তখন পুরো পার্বত্য অ লের জনসংখ্যাই ছিল প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজারের কাছাকাছি। পাহাড়ি জনপদের প্রায় চল্লিশ শতাংশ কৃষি উপযোগী ভূমিও তলিয়ে যায়। প্রথমে তাদের কাসালং উপত্যকায় বনা ল সাফ করে জমি দেওয়া হয়। পরে ১৯৬২ সালে বাঁধ নির্মাণকাজ শেষ হলে সেই উপত্যকাও পুরোপুরি ডুবে যায়। পাকিস্তান সরকার জোরালোভাবে এরপর আর কখনোই তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়নি। 

 

পূর্বপুরুষদের আবাসভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার চাকমা ভারতের অরুণাচল প্রদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। আজো তাদের ভারত কিংবা বাংলাদেশ কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই। তাদের ‘পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট শরণার্থী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর থেকে আরো বিবিধ কারণ যুক্ত হয়ে পাহাড়ের অধিবাসীদের সাথে সমতলের অধিবাসীদের দূরত্ব আরো দীর্ঘ হয়। 

 

১৯৭১ এ বাঙালি জনগোষ্ঠীর জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পাহাড়ী জনগোষ্ঠী তাদের ভাগ্য উন্নয়ণের কোনো ইশারা খুঁজে পাননি। তাই তাদের মনোভাব ছিল অনেকটা এ রকম : ‘পাকিস্তানী বা বাঙালি, যে ক্ষমতায় থাকুক না কেন আমাদের জন্যতো সবাই এক। আমরা একইভাবে শোষিত হবো।’ তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ও তাদের ওপর রাজকীয় প্রভাব তাদের এ মনোভাব তৈরির পেছনে অনেকখানি সহযোগিতা করেছে। তবে এ মনোভাব সকল পাহাড়ীর নয়। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে পাহাড়ীদের সাহসী অবদান অনস্বীকার্য। 

 

মুক্তিযুদ্ধের পর গঠিত শেখ মুজিব সরকার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে মুক্তিযুদ্ধের বৈরি শক্তি মনে করে অনেকখানি সন্দেহের দিকে তাকাত। তার প্রমাণ পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর আ লিক অধিনায়ক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জ্যাকবের লেখা ‘’ বইয়ে। তাতে তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন : বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়ার পরও শেখ সাহেবের অনুরোধে ভারতীয় সৈন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে আরো কিছুদিন থেকে গিয়েছিল।

 

১৯৭২ সালে শেখ মুজিব রাঙামাটির এক জনসভায় বলেন, ‘তোরা সবাই বাঙালি হয়ে যা’। তার এই ঘোষণা স্বাধীন বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতার জন্ম দেয়। তখন পার্বত্য জনগোষ্ঠীর নেতা এম এন লারমা তাদের বাঙালি হিসেবে চিহ্নিত করা কিছুতেই উচিত হবে না জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আলাদা একটি নৃতাত্ত্বিক সত্তা রয়েছে এবং সেটার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিলে তাদের প্রতি সুবিচার করা হবে।’ সেদিন যদি এম এন লারমার দাবী মেনে নেয়া হতো, পার্বত্য অ লের সংকট এরূপ চরম আকার হয়তো ধারণ করতো না।

 

শেখ মুজিবের বাঙালি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা, এম এন লারমার দাবী প্রত্যাখান, ভারতীয় সৈন্যদের দীর্ঘকাল উপস্থিতিতে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর মনে আতঙ্ক পড়ে। এ অবস্থায় সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের গেরিলা সংগ্রামে নিয়ে আসার ব্যাপক সম্ভাবনা আবিষ্কার করেন। তাঁর কবিতার বই ‘জনযুদ্ধের পটভূমি’তে তাঁর তখনের দারুণ উদ্দীপনা অমায়িক কাব্যিক ভাষায় তিনি প্রকাশ করেছেন। সর্বহারা পার্টির কর্মীরাই প্রথম পার্বত্য জনগোষ্ঠীর তরুণদের অস্ত্র চালানোর দীক্ষাদান করে। সে সময়ে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামে চীনপন্থী রাজনীতির জোয়ার সৃষ্টি হয়। পার্বত্য জনগোষ্ঠীর নেতারা নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য চীনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতেন এবং ইচ্ছে করলে সেগুলোতে যোগও দিতেন। সমগ্র বাংলাদেশের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর সাথে নিপীড়িত পাহাড়ীদের স্বার্থ এক ও অবিচ্ছিন্ন, এ কথা সকলে না হলেও অনেকেই বিশ্বাস করতেন।

 

১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলে খন্দকার মুশতাক সরকার সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র শব্দ দুটো মুছে দিলে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মানসিক ভীতি বহুগুণে বেড়ে যায়। বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর পাহাড়ি জনগোষ্ঠী প্রথম হোঁচট খায় বাঙালি হয়ে যাওয়ার ঘোষণা শুনে। তার ৩ বছরের মাথায় তাদের তারা শুনলো সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র কাটা পড়ে গেছে। 

 

তখন থেকে পাহাড়ের প্রগতিশীল নেতারা আগে যেভাবে নিপীড়িত বাঙালি জনগোষ্ঠীর সংগ্রামের সাথে তার সংগ্রাম অবিচ্ছিন্ন মনে করতেন, সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে যায়। বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তা তাদের মধ্যে দানা বাঁধে। শেখ মুজিব হত্যার ঘটনায় এদেশের জনগণকে বিক্ষুব্ধ করে তোলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের বাকি অ লের মতো পার্বত্য অ লের নেতাদের সাথেও যোগাযোগ তৈরি করে। তার ফলস্বরূপ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি চীনপন্থী ও ভারতপন্থী দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই দুই ধারার কর্মীদের সংঘর্ষের কারণে পাহাড়ি জনগণের অবিসংবাদিত নেতা এম এন লারমাকে প্রতিপক্ষ গ্রুপের ঘাতকের হাতে প্রাণ হারাতে হয়। এরপর থেকে ভারতের নিজ স্বার্থে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় সশস্ত্র সংগ্রামের ধারাটিই পার্বত্য রাজনীতিতে প্রবল হয়ে ওঠে। ফলশ্রুতিতে, পাহাড়িদের একটা বড় অংশ নিরাপত্তা সংকটে ভারতে আশ্রয় নেয়। 

জিয়াউর রহমান সরকার ক্ষমতায় এসে পাহাড়ের সমস্যা সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধানের উদ্যোগ নিলেন। তিনি ভাবলেন : পাহাড়ী গেরিলারা যদি ভারতীয় সামরিক সাহায্যপুষ্ট হয়ে এভাবে ক্রমাগত হামলা চালাতে থাকে, একদিন পার্বত্য চট্টগ্রাম হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। পার্বত্য এলাকা বাংলাদেশের দখলে রাখার জন্যে তিনি দু’টি পদ্ধতি গ্রহণ করলেন। প্রথমত, পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র সেনাক্যাম্প বানালেন। দ্বিতীয়ত, সমতল ভূমি থেকে দরিদ্র বাঙালি জনসাধারণকে নিয়ে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেল করলেন। যাদের বলা হচ্ছে সেটেলার বাঙালি।  

 

এতোদিন পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি-বণ্টন ব্যবস্থা বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ভূমি-বণ্টন ব্যবস্থার চেয়ে ঐতিহাসিক সময় থেকেই ভিন্ন। তাদের নিজস্ব জীবনবোধ, ভূমি বণ্টন ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের প্রচলিত জীবনবোধে কাগজ দিয়ে পাহাড়ের মালিকানা কেনা যেতে পারে, এমন ধারণা ছিল না। তাই তাদের ভূমি কাগজে-কলমে বা সমতল অ লের মতো নিয়মে বণ্টন হতো না। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শেখ মুজিব সরকারও পাহাড়ের যাপিত জীবনধারার সাথে সম্পৃক্ত তাদের নিজস্ব ভূমি বন্টন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেনি।

 

আকস্মিকভাবে পাহাড়ে বিরাজমান ভূমি-বণ্টন ব্যবস্থাকে আমলে না নিয়ে বাঙালি অভিবাসন পাহাড়ী জনগণের সেই বিপুল অংশটিকেও ক্ষেপিয়ে তুলেছিল, যারা সশস্ত্র সংগ্রামের পক্ষে ছিল না। ঐ যে শুরুতে বলেছিলাম পাহাড়ে আগে বাঙালিরা অধিবাসীরাও ছিল এবং তাদের নিয়ে অন্য জনগোষ্ঠীর সমস্যা নেই। মূল সমস্যা বাঁধলো যখন জিয়া সরকার কর্তৃক পাহাড়ে সেটেল করা বাঙালিরা সরকারী বরাদ্দ পাওয়ার কাগজ নিয়ে এসে পাহাড়ি অধিবাসীদের জমির দখল নেয়া শুরু করলো, তাদের মধ্যে সংঘাত এর শুরু হলো। পাহাড়িরা সেসব বাঙালিদের বলছেন ‘সেটেলার’। এসব সংঘাতে অগণিত বাঙালি, আদিবাসী মারা যান।  

 

তারপরে এরশাদ সরকারের সময়েও পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ক্ষোভ মোকাবিলায় সেই সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি অব্যহত ছিলো। তার সময়ে বেশকিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। কিন্তু সেগুলো পার্বত্য অ লের উন্নয়ণে নয় সেনাবাহিনীর চলাচলে সুবিধার্থে তৈরি করা হয়েছে বলেই অধিকাংশ পাহাড়ী জনগণের ধারণা। পাহাড়ে বিপুল হারে সেনা মোতায়েন পাহাড়ি ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর মানসিক দূরত্ব প্রচুর বাড়িয়ে দিয়েছিলো।

 

১৯৯১ এ খালেদা জিয়ার সরকারের আমল থেকেই একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল সেনা মোতায়েন রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট সমাধান সম্ভব নয়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিকভাবে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে। খালেদা জিয়ার সরকার একটি আলোচনার সূচনা করেছিল কিন্তু বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি।

 

১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে। সে চুক্তিতে পাহাড়িদের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। চুক্তির মোদ্দা কথা কথা ছিল, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং সে জন্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ও আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে : 

 

১। উপজাতীয়দের ভূমি মালিকানা অধিকার ফিরিয়ে দেয়া।

২। তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদ সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। উপজাতীয় আইন এবং সামাজিক বিচারকাজ এই পরিষদের অধীনে থাকবে।

৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা।

 

কিন্তু শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের এ যাবৎকালের সরকারগুলোর সাহসিকতা, আন্তরিকতার  ও সদিচ্ছার যথেষ্ঠ ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। পাহাড়ের মূল যে সমস্যা, সেই ভূমি সমস্যার কোনো সুরাহাই হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী ভূমি কমিশন গঠিত হলেও তা কার্যকর হয়নি কখনোই। চুক্তির পর সামরিক উত্তেজনার জন্য ভারতে আশ্রিত বাস্তুহীন আদিবাসীরা দেশে ফিরে তাদের নিজেদের পৈত্রিক ভিটা ফেরত পাননি। চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন হয়নি অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে বটে কিন্তু সেগুলোর হাতে ক্ষমতা নেই। যেমন সাধারণ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, পুলিশ, ভূমি ব্যবস্থাপনা এবং বন ও পরিবেশ এসব বিষয় জেলা পরিষদ ও আ লিক পরিষদের আওতাধীন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। 

 

শান্তি চুক্তির পার্বত্য অঞ্চলে জটিল এক রাজনৈতিক সমীকরণের জন্ম দিয়েছে। চুক্তি সম্পাদনের সাথে সাথেই এর বিরোধিতা করে তৈরি হয়েছিল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ। বর্তমানে ইউপিডিএফ এবং জনসংহতি সমিতির দুটো করে গ্রুপ রয়েছে। এরা সবাই পরস্পরের প্রতিপক্ষ ও একে অপরের সাথে সংঘাতে লিপ্ত। বিভিন্ন গ্রুপ তৈরিতে ভূমিকা রেখে নিরাপত্তা বাহিনী পাহাড়ে ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ পলিসি গ্রহণ করেছে বলে পাহাড়ি নেতাদের অভিযোগ রয়েছে। 

 

এরপর থেকে এতোগুলো বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে জঙ্গলের আইন চালু রয়েছে। সেনা উপস্থিতি এবং সেনা শাসন এক কথা নয়। সেখানের পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সম্প্রতি, জুলাই অভ্যুত্থান শেষে তরুণেরা যখন সারাদেশে দেয়ালচিত্র অংকনের উৎসব করছিলো, একই কাজ করতে গিয়ে পাহাড়ে তারা বাধা পাচ্ছিলো। বান্দরবানের গ্রাফিতি করার অনুমতি চেয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্প কমান্ডারের কাছে আবেদন করেছে- এমন ছবি আমাদের কাছে পরিষ্কার করে, জুলাই অভ্যুত্থানের ফলে পাহাড়ে বড় রকমের কোনো পরিবর্তন সংগঠিত হয়নি। 

 

সেনাবাহিনীর লোকেরা পাহাড়ীদের অকথ্য নির্যাতন করেছে এবং অসংখ্য লোমহর্ষক হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। আবার, শান্তিবাহিনীর লোকদের হাতেও সেনাবাহিনীর অগণিত সৈনিককে প্রাণ দিতে হয়েছে। মাঝখানে অনেক নিরীহ বাঙালি এমনকি পাহাড়ীও তাদের হাতে নিহত হয়েছেন। বিরোধ সেনাবাহিনী এবং শান্তিবাহিনীকে ছাড়িয়ে পাহাড়ী এবং বাঙালি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। এ পযন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী, বাঙালি ও সেনাবাহিনীর লোক মিলে কত মানুষ মারা গেছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।

 

পাহাড়ে উন্নয়ণের নামে কেবল সড়ক তৈরি ও পর্যটনের বিস্তার ঘটেছে। নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ণে আক্ষরিকভাবে কার্যকরী কোনো উল্লেখজনক কাজ সেখানে হয়নি। সেখানকার শিক্ষার হার কম, কারন স্কুল-কলেজ নেই, যে কয়টা আছে সেগুলোও অনেকের জন্য দূরে হয়ে যায়, শিক্ষকেরা স্কুলে আসতে চান না, ঠিকমতো পাঠদান হয় না। এজন্যেই দেশের যে কোন জেলার চেয়ে শিক্ষার হাতে বান্দরবান বা খাগড়াছড়ির মতো জেলাগুলো পিছিয়ে। চিকিৎসার অভাবে সেখানে মানুষজন সাধারণ রোগব্যাধিতেও মারা যায়। আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতায় রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখেছি সেখানে সামান্য কাটাছেঁড়ার ড্রেসিং করার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামেরও ঘাটতি রয়েছে।

 

এমন জায়গায় স্কুল কিংবা হাসপাতাল এর বদলে কর্পোরেট আর রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে উন্নয়ণ হিসেবে ফাইভ স্টার হোটেল বানানো বিলাসিতা নয় কি? এই পর্যটনগুলোও তৈরি হচ্ছে পাহাড়িদের ঘরবাড়ি উজাড় করে। যেমন- সাজেক ১৫-২০ বছর আগেও ছিল একদমই নিভৃত এক পাহাড়ি পল্লী। বংশ পরম্পরায় কয়েকশো বছর ধরে সেখানে বাস করতো খুকি সম্প্রদায়ের ষাটটি পরিবার। ট্যুরিস্ট স্পট বানানোর জন্য বছরের পর বছর ধরে বসবাসরত বৈধ অধিবাসী খুকি সম্প্রদায়ের মানুষগুলোকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হলো। পাহাড়ে আগুন জ্বললো, পুড়লো জুমের ক্ষেত, ঘরবাড়ি, মরলো মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আদিবাসীরা চলে গেল আরও গভীর জঙ্গলে, কিংবা সীমান্ত পেরিয়ে ত্রিপুরায়। আজ সেখানে ট্যুরিজম খালি আদিবাসীদের যাপিত জীবনকেই বিপন্ন করেনি, প্রতিনিয়ত বিপন্ন করছে পরিবেশ ও ভৌগৌলিক জীববৈচিত্র্যকেও।

 

সাজেকের মতো ঘটনা আরও অৎ¯্র হৃদয়ভাঙা দৃষ্টান্ত আছে এই তিন পার্বত্য জেলায়। বন্দুকের নলের মুখে, জোর জবরদস্তির ভয়ে, কিংবা নির্যাতিত হবার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন- এমন ঘটনা পাহাড়ে অহরহ ঘটে। ‘তেংপং চূট’ নামের জায়গাটা কিভাবে নীলগিরি হলো,  ‘শোং নাম হুং’ কিভাবে চন্দ্রপাহাড় হলো- এসব প্রশ্নের পেছনে হাজারো মানুষের কান্না আর আর্তনাদ মিশে আছে। এখানে যে শুধু জনগোষ্ঠীগুলোর বাপদাদার ভিটেমাটির ওপর দখল হয়েছে তা নয়, তাদের সংস্কৃতির ওপরও দখল হয়েছে।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবী। পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ ঐতিহাসিক সংকটের আসল প্রকৃতি অনুধাবন করতে হবে, নাহয় বাংলাদেশ সরকার বা পাহাড়ী জনগোষ্ঠী কারো পক্ষে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

 

একটা সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে পার্বত্য জনগোষ্ঠীর ওপর শোষণ, তাদের সম্পদ লুন্ঠন, ভিটেঘর দখল, কাপ্তাই বাঁধের কারণে আকস্মিক গৃহহীন হয়ে পড়া লক্ষাধিক মানুষ, নির্বাসন, সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন নীতি, পার্বত্য এলাকায় বাঙালি অভিবাসন – এ সকল ঘটনা একযোগে পার্বত্য অঞ্চলে বিরাজমান সংকটের একটি দিক মাত্র। এ সংকট সৃষ্টিতে ভারতের একটি বড় নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে। মার্কিন, চীন এবং মায়ানমারেরও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। সেসব জিনিস বাদ দিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি বিরোধকে একমাত্র কারণ বলে ধরে নিয়ে আসল সংকটকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়। তাতে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস বাধাগ্রস্ত হবে। ভূ-রাজনৈতিক বিচারে অবশ্যই পার্বত্য চট্টগ্রামের সংকট ভারতের পূর্বা লীয় রাজ্যসমূহ বা সেভেন সিস্টার্সের সংকটের একটি সম্প্রসারিত রূপ। 

 

পার্বত্য অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দুটি দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি হলো শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন। পার্বত্য জনগোষ্ঠী যেন শান্তিপূর্ণভাবে তাদের এলাকায় বসবাস করতে পারে ও তারা যেন তাদের জমির ওপর পূর্ণ অধিকার ফেরত পায়। তাদের মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা যেন ক্ষতিপূরণ হয়। নিজেদের সংস্কৃতির অবাধ বিকাশ সাধন এবং মানবিক, নাগরিক ও জাতিগত সকল অধিকার যেন তারা ভোগ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের অন্যান্য অ লের জনগোষ্ঠীর সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে শিল্প-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা যেন নিজেদের আর্থিক বুনিয়াদ শক্তিশালী করার সূযোগ পায়। পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের নিজ মার্তৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। 

 

দ্বিতীয়টি দিকটি হলো ভারত সেভেন সিস্টার্সের সংকটের সাথে বাংলাদেশের পার্বত্যগোষ্ঠীকে জড়িত করে বাংলাদেশের ওপর অনাবশ্যক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে তার ভেতরের সংকট যাতে বাংলাদেশের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার সূযোগ না পায়, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বাংলাদেশের আ লিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

 

পাহাড়ী সশস্ত্র রাজনৈতিক কর্মীদের উপলব্ধি করতে হবে যে শুধু ভারত নয়, কোনো দেশই নিজস্ব স্বার্থ ছাড়া চিরদিন তাদের দায়িত্ব বহন করতে রাজি হবে না। বাংলাদেশের সরকারকেও নিশ্চিত করতে হবে যাতে অত্যাচার-নির্যাতন করে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বি ত করা না হয়। পাহাড়ী জনগোষ্ঠী যদি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিতেন, তাহলে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন হত না। যুদ্ধের মাধ্যমে সবকিছুর নিষ্পত্তি করতে হত। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই এদেশের নাগরিক হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই এদেশের সুখ-দুঃখ ও ইতিহাসের শরীক হয়ে আছেন। তারা এ দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চান না। এ দেশ যতখানি একজন বাঙালির, ততখানি তারও। 

 

বাংলাদেশ সরকার এবং সমতল ভূমির অধিবাসীদের আদিবাসীসহ সকল নাগরিক এর নাগরিক মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। জাতি, ধর্ম বা বর্ণের কারণে একজন নাগরিক যাতে কোনোভাবেই নিজেকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক না ভাবেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন ও আরো যা করা প্রয়োজন, করতে হবে। পার্বত্য জনগোষ্ঠীর কেউ যদি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে যোগ্যতম হোন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়ার মতো মনমানসিকতা অধিকাংশ বাঙালি জনগোষ্ঠীর তৈরি করতে হবে। 

স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমরা আশা করবো কোনো পক্ষ এমন কোনো ছলচাতুরি করবেন না যাতে অপরপক্ষ মনে করেন যে তারা বি ত হয়েছেন। ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ অশান্তি ডেকে আনতে পারে এমন ক্ষণস্থায়ী শান্তি কোনো পক্ষের জন্য লাভজনক নয়।

 

ভারত, আমেরিকা, চীন বাংলাদেশকে নিয়ে কি করবে তার একটি ধরাবাঁধা ছক আছে। ইতিহাস বলছে বাংলাদেশের সরকারগুলোর সেই ছকের মধ্যে পড়ে যাওয়ার প্রবণতা আছে। তবে এবারে তার ব্যাতিক্রম নিশ্চিত করতে হবে৷ শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যাতে কোনো বহিঃশক্তির কূটকৌশলের শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা কিভাবে আমাদের আত্মরক্ষা নিশ্চিত করব, সেই ছক সবাই মিলে প্রণয়ন করতে হবে। 

 

আমাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বা কোনো চুক্তি সম্পাদনের ক্ষেত্রে জনগণ সাধারণত অন্ধকারেই থাকে। সংসদে আলোচনা হয় না, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করা হয় না। নাগরিকদের সঙ্গে পরামর্শ সে তো অনেক দূরের ব্যাপার। খালি বিগত সরকারের কথা বলছি না, তার আগের সরকার, পরের সরকার, সব সরকারের আমলেই এমনটি হয়ে আসছে। এ ধরণের অচলায়তনকে ভেঙে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কোন কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে এবং পাহাড়ের সংকটগুলোকে ঠিকমতো অনুধাবন করে স্থায়ী সমাধানের উদ্দেশ্যে সার্বজনীনভাবে মুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক আলোচনার আয়োজন করতে হবে।

 

অতি গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি কথা হলো যে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক বিকাশ-প্রক্রিয়ায় বিযুক্ত রেখে কেবল শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নেই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাদের দারিদ্র্য তাদের অশান্তির পথে টেনে নিয়ে যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবহন, কলকারখানা ইত্যাদিতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ আছে, তার খুব বেশি মূলধন পার্বত্য অধিবাসীদের কাছ থেকে আসেনি। পার্বত্য এলাকার লোকদের হাতে যদি পর্যাপ্ত মূলধন থাকত এবং নিজেদের অবহেলিত, বি ত ও প্রতারিত না ভেবে তারা যদি বাঙালিদের মতো অবাধে সমগ্র বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে তারা নিজেরা বন্দুক নিয়ে বিদ্রোহীদের প্রতিরোধ করতেন। 

 

অতীতের বহুকাল ধরে চলমান সংশয়, সন্দেহ, প্রতিরোধ, আক্রমণ, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্ট সংকটসমূহের সৃষ্টিশীল সমাধানের জন্য সকলের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা রেখে এক নতুন ধরণের টেকসই ও জনমুখী বন্দোবস্ত করা প্রয়োজন। অজস্র শহিদের রক্তে অর্জিত বৈষম্যহীন বাংলাদেশে সকল বিভক্তির অবসান ঘটুন। পাহাড় থেকে সমতল, রাজপথ থেকে বেডরুম-সর্বত্র নাগরিক এর নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক।

 

রক্তবীজ অর্ক 

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 

rocktobeej@gmail.com

rocktobeej.art.blog 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button