সনমান্দিতে দুই জাপা নেতার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী
সোনারগাঁ প্রতিনিধি: ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা। সাবেক এমপির নাম ভাঙিয়ে অনেক অপকর্ম করেছেন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী ভয়ে কেউ মুখ খুলতেও পারতো না।
গত ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর সেই তারাই এখন আবার ভিন্ন বেশে ফিরে আসতে চাইছে। নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছেন বিএনপি কর্মী বলে। আগের মতোই মানুষকে হয়রানি জুলুম নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে তারা।
সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে এমনই অভিযোগ পাওয়া গেছে সাবেক মেম্বার সাইফুল ও সানোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে। সাইফুল সনমান্দি ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছিলেন। আর সানোয়ারা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির আহবায়ক এবং ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য।
জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি থাকাকালীন এমপির ঘনিষ্ঠজন ও মেম্বার পরিচয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। চাঁদাবাজি, লুটপাট, শালিশ বিচারের নামে টাকা নেয়াসহ নানান অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী।
সরেজমিন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের টেমদী, লেদামদী, মামুদ্দী, দরিকান্দী, নোয়াকান্দী, গাংকুল কান্দী ও হরিহরদী গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল ১০ বছর এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার প্রভাব খাটিয়ে জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন যুগ্ম আহবায়ক ও ইউপি সদস্য সাইফুল এবং জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন আহবায়ক সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সানোয়ারা হেন কোন অপকর্ম নেই যা সে করেনি।
তাদের দাপটে এখনো আতঙ্কে দিন পার করছেন ৭ গ্রামের জনসাধারণ। কেউ মুখ খুলতে চাইলেই নেমে আসে অন্যায় নির্যাতনের খড়গ।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সর্বত্র যখন স্বৈরাচারের দোষররা পালিয়ে বা আত্মগোপনে চলে গেছে।
তখনও পল্টি নিয়ে নিজেদের খোলশস বদলাতে সময় নেননি সাইফুল-সানোয়ারা। স্থানীয় বিএনপি নেতার পেছনে ভীড়ে গেছেন তারা। এখন পরিচয় দেন তারা নাকি একসময় বিএনপিরই কর্মী ছিলো।
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আগের মতোই অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। তাদের কারনে প্রকৃত বিএনপির নেতাকর্মীরাও বিব্রত। ফের এলাকাবাসীকে মামলা ও পুলিশি গ্রেফতারের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন তাদের অতিত অপকর্ম কেউ বললেই।
এ বিষয়ে এলাকার সাবেক মেম্বার সামছুল হক বলেন, গত নির্বাচনে সে এমপি খোকার ক্ষমতার দাপটে আমাকে অবৈধ উপায়ে হারায়। সে জাতীয় পার্টির এমপির জোরে নিজেকেও এমপি মনে করতো। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকেও সে মানতো না। তার চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ফিরিস্তি গ্রামবাসীর কাছে জিজ্ঞাস করেন। আমরা এই অত্যাচারীর বিচার চাই। আগে সে জাতীয়পার্টির জোরে করছে। এখন আবার বিএনপির নাম দিয়ে এলাকার মানুষকে মামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায়না।
হরিহরদী গ্রামের কবির বলেন, এই সাইফুল মেম্বার যা করছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। গত দুই বছর আগে লেদামদীর জুলহাস পাগলার বাড়ি থেকে প্রকাশ্যে জোর করে একটি গরু নিয়ে বিক্রি করে দেয় সাইফুল মেম্বার ও তার সহযোগীরা।
টেমদী গ্রামের নিরীহ মানুষ আলমগীরের ২টি গরু জোর করে নিয়ে জবাই করে দলীয় লোকজন নিয়ে খেয়ে ফেলছে। এসবের কোন বিচার হয়নি।
লেদামদী গ্রামের জয়নাল আবেদিন নিজের যায়গাতে নিজের ঘর উঠাতে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছে সাইফুল মেম্বার ও সানোয়ারা মেম্বারনীকে। জয়নাল আবেদিন বলেন, আমার নিজের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মান করেলে আমি ঐ রাস্তার সাথে মাটি ভরাট করে একটা দুই চালা ঘর উঠানোর সময় সাইফুল মেম্বার ও সানোরা মেম্বার আমার কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। নয়তো মামলা দিয়ে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখায়। পরে ১০ হাজার টাকা দিয়া রফাদফা করে আমি ঘর উঠাই।
মামুদ্দী গ্রামের নার্গিস বলেন, সানোয়ারা মেম্বারনী আমাকে মাতৃত্ব ভাতার কার্ড করে দিবে বলে পনেরো শত টাকা নিছে। আমাকে কার্ড করে দেয়নি।
নোয়াকান্দীর আমির হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি, গোয়ালের গরু ও পুকুরের মাছ লুটপাট ও তাদের অনুগত না হলে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি সম্পর্কে ৫ আগস্টের পর আমরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা এখন আবার বিএনপির রূপ ধারণ করে আমাদের কে কোটা আন্দোলন বিরোধী বানিয়ে মিথ্যা মামলা ও পুলিশ দিয়ে গ্রেফতারের ভয় দেখাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সাইফুল মেম্বার বলেন, তারা আমার প্রতিপক্ষ তাই আমার বিরুদ্ধে এসব বলছেন। আমিতো পূর্ব থেকেই বিএনপি করতাম। মাঝখানে জাতীয় পার্টির এমপি থাকায় উনার সাথে মিলে রাজনীতি করেছি এলাকার উন্নতি করার জন্য।