হানিফ সংকেত: টেলিভিশনের ইতিহাসের এক অমর নাম
আকিয়া জাহান- জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:০০
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে হানিফ সংকেত এবং তার অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ সমাজের নানা অসংগতি হাস্যরসের মাধ্যমে তুলে ধরছেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি আমাদের সামনে এক নতুন দর্শন খুলে দিয়েছেন। আমরা তাকে এক নামে চিনি, এবং তিনি হলেন আমাদের প্রিয় হানিফ সংকেত।
একের পর এক হাস্যরসাত্মক উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি বিটিভির রাত আটটার বাংলা সংবাদের পর আমাদের বিনোদন দিয়েছেন। ‘ইত্যাদি’ দেখার জন্য বহুদিন আমরা সেদিনের সেই সময়টাতে অপেক্ষা করেছি।
বাংলা ভাষায় তার দক্ষতা, শব্দের সাথে মিশ্রিত প্রাণবন্ত উপস্থাপনা এক দুর্লভ উদাহরণ। হানিফ সংকেত শুধু একজন জনপ্রিয় উপস্থাপকই নন, তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে, ‘উপস্থাপনা’ একটি শিল্প এবং তার প্রতিটি অনুষ্ঠানই তার শিল্পের প্রমাণ।
তাঁর প্রকৃত নাম এ কে এম হানিফ। তিনি ২৩ অক্টোবর, ১৯৫৮ সালে বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল হাকিম ছিলেন পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
ছোটবেলা থেকেই তার প্রতিভা সবার কাছে পরিচিত ছিল। তার কথা বলার দক্ষতা এবং সহজেই মানুষের মন জয় করার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ।
হানিফ সংকেতের পথচলা
হানিফ সংকেত ‘হানিফ সংকেত’ হয়ে ওঠার আগে প্রকৌশল শাস্ত্রে লেখাপড়া শেষ করে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তার মধ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আগ্রহ ছিল, এবং তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। এভাবেই তার পরিচয় ঘটে টেলিভিশন জগতের আরেক নক্ষত্র, ফজলে লোহানীর সাথে। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত ফজলে লোহানী উপস্থাপনা করেন তার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’।
১৯৮৯ সালে, হানিফ সংকেত শুরু করেন বাংলাদেশের টেলিভিশন ইতিহাসের অন্যতম সফল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’, যা এখনো দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। বিবিসির জরিপ অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বাঙালি ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠান নিয়মিত দেখেন।
নতুনত্ব এবং সৃজনশীলতা
‘ইত্যাদি’ প্রতিটি অনুষ্ঠানে রাখে ভিন্নতা। হানিফ সংকেতই প্রথম ইংলিশ ভিডিও ক্লিপকে বাংলা ভাষায় ব্যঙ্গাত্মক ডাবিং করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের জন্য উপহার হিসেবে পরিবেশবান্ধব গাছ প্রদান করা হয়, যা অন্য কোনো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে কখনো করা হয়নি।
তিনি শুধুমাত্র উপস্থাপক নন, একইসাথে একজন পরিচালক, নাট্যকার, নির্মাতা, লেখক ও নির্দেশক। একজন সফল লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেও তার সুখ্যাতি রয়েছে।
ইত্যাদির সাফল্য এবং পুরস্কার
হানিফ সংকেতের মাধ্যমে দেশেই শুরু হয় ভেজালবিরোধী আন্দোলন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ‘ইত্যাদি’ মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ টিভি অনুষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে, তিনি পরবর্তী প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে নিজেকে পুরস্কৃত না করার সিদ্ধান্ত নেন।