ব্যাংকের গ্রাহককে চাপে ফেলতে এবার চট্টগ্রামের আলোচিত সেই গ্রাহক মুর্তজা আলীর বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকটির চান্দগাও শাখার গ্রাহক, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মুর্তজা আলী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান শওকত আলী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৪৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রায় ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ মামলা করেন। এই ঘটনার সপ্তাহখানেক পর পাল্টা মানহানির মামলা দায়ের করলো ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি-ইবিএল। ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংক গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের মামলা গ্রহণ করে আদালত সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরই বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) এ মামলা করেছে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়।
জানা যায়, ইস্টার্ন ব্যাংকের করা এই মামলায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী ও ইবিএল এর গ্রাহক মো. মুর্তজা আলীর বিরুদ্ধে ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। পাঁচলাইশ চট্টগ্রামের বাসিন্দা মোহাব্বত আলীর ছেলে মো. মুর্তজা আলী সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশে পরিকল্পিতভাবে এ মামলা করেছেন বলে অভিযোগ দিয়েছেন ইবিএল লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রিন্সিপাল অফিসার এইচ এম হাসান মাহমুদ। সম্প্রতি মুর্তজা আলী তার নামে থাকা ব্যাংকের এফডিআরের ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ মোট ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকের সুনাম ক্ষুন্ন করতে এবং ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের হয়রানির উদ্দেশে এই মামলা করা হয়েছে বলে দাবি ইবিএল কর্তৃপক্ষের।

এর আগে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ ৪৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও শাখার গ্রাহক মুর্তজা আলী। তার দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক সরকার হাসান শাহরিয়ার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন সিআইডিকে। মামলায় ভুক্তভোগী গ্রাহক মুর্তজা আলী অভিযোগ করেন, তিনি ২০১৭ সালে ইবিএলের চান্দগাঁও শাখায় ৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার ছয়টি স্থায়ী আমানত খোলেন। কিন্তু, তিনি দেশে না থাকার সুযোগে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দুটি জাল সঞ্চয় হিসাব খোলা এবং চারটি ঋণ হিসাব খুলে ৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা হস্তান্তর করে আত্মসাত করা হয়। সবমিলিয়ে ১১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন তিনি।
মুর্তজা আলী এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেন, তিনি স্থায়ী আমানত বা এফডিআর খুললেও কোনো ঋণ তিনি নেননি। অথচ, তার এফডিআর হিসাবের বিপরীতে সঞ্চিত অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ বিতরণের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময় উল্টো সেই অর্থ ফেরত না দেওয়ার দায়ে মুর্তজা আলীর নামে থাকা এফডিআর ভাঙিয়ে ঋণের অর্থ নগদায়ন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা কথা বলার পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান শওকত আলী অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় আগের সরকারের সময়ে বিষয়টি নিয়ে তিনি আদালতে যেতে সাহস করেননি বলে দাবি করেন মুর্তজা আলী। বর্তমান সময়কে সুসময় দাবি করে ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মামলাটি করেছেন বলে জানান মুর্তজা। বিষয়টি খতিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে এবং তার আত্মসাত করা অর্থ ফেরত পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। তবে, এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন এবং গণমাধ্যমে ভিন্ন বার্তা দিয়ে বিচারকে প্রভাবিত করার শঙ্কায় আছেন মুর্তজা আলী। নতুন করে মানহানির মামলার মাধ্যমে গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুন্ন হওয়ার শঙ্কাও জানান তিনি।