হকারদের দখল, অবৈধ পাকিং, ধীর গতির ড্রেনের কাজে ভোগান্তিতে নারায়ণগঞ্জ নগরবাসী

নারায়ণগঞ্জের এই ব্যস্ততম নগরীতে যতো গুরুত্বপূর্ন সড়ক, ততোটাই গুরুত্বপূর্ন ২ পাশের ফুটপাত। তবে এই ফুটপাতেই পথচারীদের যেন পিছু ছাড়ছে না ভোগান্তির। কখনো হকার, কখনো মটোরসাইকেলের পাকিং, আবার কখনো ড্রেনের কাজের জন্য মাসের পর মাস ফুটপাত ভাঙা। সব মিলিয়ে এ শহরের ব্যস্ততার সাথে ভোগান্তির ও কোন শেষ নেই।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সরেজমিনে নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া থেকে ২নং গেইট পর্যন্ত এবং সিরাজউদ্দৌলা সড়কে আমলাপাড়া মোড় থেকে ১নং রেল গেইট দেখা মেলে এমন ভোগান্তির দৃশ্য।

চাষাঢ়া থেকে সড়কের একপাশের ফুটপাতে ড্রেনের কাজের জন্য অনকেটা অংশ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ড্রেনের ময়লা রাখা হচ্ছে সড়কের পাশে। সম্প্রতি কদিন পর পর বৃষ্টি হওয়ায় সেই ময়লা ও তার দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সম্পূর্ন সড়কেই। বৃষ্টির পানিতে সড়কের কিছু কিছু জায়গায় তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়াও ফুটপাতের যে অংশে ড্রেনের কাজ করা হচ্ছে না সেখানে পার্কিং করা হয়েছে মটোরসাইকেল কিংবা দখল নিয়েছে হকাররা। এতে করে ভোগান্তিতে পরেছে পথচারীরা। কর্মব্যস্ত শহরে নিজের গন্তব্যে যেতে এই ময়লা, ভাঙা ও হকারের ভিড় ঠেলে যেতে হচ্ছে তাদের। এই ভোগান্তি কাধে না নিয়ে অনেকেই সড়কের মাঝে দিয়ে হেটে যাচ্ছেন।

এদিকে ভোগান্তি আরও এক ধাপ বেড়েছে সিরাজউদ্দৌলা সড়কে। আলাপাড়া মোড় থেকে কালিরবাজার পর্যন্ত রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্ত করে করা হচ্ছে ড্রেনের কাজ। রাস্তা কাটার মাটি ফেলে স্তুপ করে রাখা হয়েছে রাস্তার পাশেই। গণপরিবহনের জন্য সম্পূর্ন বন্ধ হলেও পথচারীরা এই পথ পারি দিচ্ছেন কয়েকটা ইটের উপর দিয়ে। এ সড়কের কালির বাজার থেকে ১নং রেলগেইট পর্যন্ত ফুটপাত দখল করেছে বিভিন্ন কোম্পানির গাড়ি, হকার ও ফল ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে এক হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে ডিআইটির এক দোকানি রওশান বলেন, ফুটপাতে যে পথচারীরা হাটতে পারে না এই সমস্যা আজ থেকে না, বহুদিন আগে থেকে। আর শুধু একটা না বহু সমস্যা আছে ফুটপাতে। কদিন প্রশাসন উচ্ছেদ চালায়, পরে আবারও যেই লাউ সেই কদু। তাও আগে ফুটপাত দিয়ে কোন ভাবে হাটতে পেরেছি। কিন্তু এখন চাষাঢ়া থেকে এই ফুটপাত ভেঙে বিভিন্ন লাইনের কাজ ও ড্রেনের কাজ শুরু হয়েছে। হাটার মতো এখন ফুটপাতই নেই। ২ কদম হাটলেই সামনে পরে হয় ভাঙা। ফুটপাত থেকে নেমে পাশে দিয়ে যাওয়ার অবস্থা নেই, কারণ সড়কের পাশে রাখা হয়েছে ইট বালু আর ড্রেনের ময়লা। সরকারি এই কাজ শেষ হতে কতদিন লাগে কে জানে। সরকার পরিবর্তন হলো কিন্তু প্রতিনিয়ত এই ভোগান্তির কোন পরিবর্তণ দেখলাম না।

ব্যবসায়ি আহসান বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আগেও দেখেছি আধাঘন্টার বৃষ্টিতে বিবি রোডে হাটু সমান পানি উঠেছে। আমার বাসা পাঠানটুলি হওয়ায় প্রতিদিন খানপুর কালিরবাজার হয়ে দ্বিগু বাবুর বাজারের মধ্য দিয়ে দোকানে আসতে হয়। এই গতকাল আর আজকের বৃষ্টিতে সড়কের কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। কালির বাজারে কাঁদা-ময়লা একাকার অবস্থা করে রেখেছে। রোজার আগে থেকে এই রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। রোজা রেখে পুরো রমজান কষ্ট করে এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়েছে। গর্তের মাটি রাখা হয়েছে সড়কের উপর। সেখানে পা দিয়ে ময়লায় ডেবে যায়। আগে এ সড়কে যানজটের আর বর্জ্যের দুর্গন্ধের সমস্য ছিলো। কিন্তু এখন একবারে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখনো কাজ শেষ হয়নাই, আরও ক মাস লাগে তাও জানি না।

চাকুরিজীবি ফরহাদ বলেন, এ সড়কে আগে সকালে ময়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য সিটি কর্পোরেনের গাড়ি আসতো। শুধু একটা গাড়ির জন্য পুরো সড়ক আটকে যেত। এখন সড়কে এতো বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। সারা বছর এই সড়কে কারো নজর পরে নাই, এই রমজান মাস থেকেই শুরু হয়েছে এ কাজ। তারপর কালির বাজার, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল, নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনের ২ পাশের ফুটপাত তো দেখাই যায় না। কালিরবাজারের ফ্রেন্ডস মার্কেটের সামনে থেকে ১নং রেল গেট পর্যন্ত। ফুটপাতে চশমার দোকান, ফলের ভ্যান, বিভিন্ন অস্থায়ী ব্যাগের দোকান দিয়ে দখল করে রেখেছে। এখান দিয়ে এখন বড় বড় বাস আসে যায়, ফুটপাত না থাকায় আমাদের সড়ক দিয়ে হাটতেও ভয় লাগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button