রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা
রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফরম বাছাই শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ তাঁর কার্যালয়ে এ ঘোষণা দেন। মো. সাহাবুদ্দিন দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদে একজনই মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী, মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয় আজকেই প্রজ্ঞাপন জারির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হবে।’
তিনি জানান, ‘ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত সময়ে মো. সাহাবুদ্দিন-এর নামে দু’টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। ১৩ ফেব্রুয়ারি বাছাইয়ের সময় একটি মনোনয়নপত্র সম্পূর্ণরুপে বৈধ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরেকটি মনোনয়নপত্র গ্রহণের আবশ্যকতা ছিল না।’
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত ঘোষণাপত্র পড়ে প্রধান নির্বচন কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের জন্য জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পর মাত্র একজনের মনোনয়নপত্র বৈধ থাকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী জনাব মো. সাহাবুদ্দিন, পিতা-মরহুম শরফুদ্দিন আনছারী-কে গণপ্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।’
মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রস্তাাবক আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সমর্থক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ওইদিন নির্বাচন কমিশনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে দলের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে যায়। পরে তারা দলের প্রার্থী মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে কমিশন কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ প্রমুখ।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় বারের মতো রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার নেন মো. আবদুল হামিদ। সেই অনুযায়ী তাঁর ৫ বছরের মেয়াদ আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে।
ইসি সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ও জনসংযোগ শাখার পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের পক্ষে দু’টি মনোনয়নপত্র দাখিল করে। সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ দু’টি মনোনয়নপত্রেই প্রস্তাবক ও সমর্থক।’
মো. সাহাবুদ্দিন ব্যক্তিগত জীবনে এক পুত্র সন্তানের জনক এবং তাঁর স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব ছিলেন। মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। তিনি ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইতিপূর্বে জেলা ও দায়রা জজ এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) বিভাগে যোগদান করেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন।
তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা-কর্মীর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন এবং মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডের অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছাত্র জীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকান্ডের পর তিনি কারাবরণ করেন। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনে মনোনয়নপত্র দাখিল সম্পর্কে বলা আছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত দিন ও সময়ের মধ্যে কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে ওই পদের জন্য মনোনীত করে নির্বাচনী কর্তার কাছে একটি মনোনয়নপত্র দিতে পারবেন। যে মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে তাঁর স্বাক্ষর থাকবে এবং সমর্থক হিসেবে অন্য একজন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষর থাকবে; সেই সঙ্গে যিনি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য মনোনীত হতে যাচ্ছেন, তাঁরও ওই মনোনয়নপত্রে সম্মতিসূচক স্বাক্ষরিত বিবৃতি থাকবে।