২২ তম চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন ২০২৩ অনুষ্ঠিত

স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সুবিধাবঞ্ছিত শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানায় দেশের নানা প্রান্তের শিশু সংসদ সদস্যরা।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত চাইল্ড পার্লামেন্ট-এর ২২তম অধিবেশনে ১৬টি বিশেষ অঞ্চলের ২২ জন মেয়ে ও ২১ জন ছেলে (সর্বমোট ৪৩ শিশু) চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্যরা তাদের সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি এই দাবি পেশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মহোদয় জনাব ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।

বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবছর বিশেষ অঞ্চলের শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ এর অগ্রযাত্রায় শিশুদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ বাজেট বরাদ্দকরণ এবং এই অঞ্চলের শিশুদের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিতে মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর কাছে চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্যগণ সুপারিশ করেন। ২০৩০ এর মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা আমাদেরকে অর্জন করতে হলে, এই বিশেষ সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠির তথা শিশুদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে হবে বলে শিশুরা মনে করেন। এসময় শিশুরা ২২ তম চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন প্রধান অতিথি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতমিন্ত্রী  জনাব ড. শামসুল আলমের সামনে উত্থাপিত শিশুদের সুপারিশসমূহ অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০- ২০২৫) তে অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

এ ছাড়া ২০২২ সালে ২১তম চাইল্ড পার্লামেন্ট এ প্রধান অতিথি হিসেবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান, এমপির উপস্থিতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রান্তিক অঞ্চলে শিশুদের জীবনমান উন্নয়নে অসংখ্য কার্যক্রম এবং প্দক্ষেপ গ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা জানায় শিশুরা।  তারা বলেন, বিগত চাইল্ড পার্লামেন্টে শিশুদের উত্থাপিত বিষয়সমূহের উপর বর্তমান সরকার অসংখ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্তন, বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস চালু, শিশু আইন ২০১৩ বাস্তবায়নে জেলা ও উপজেলা শিশুকল্যাণ বোর্ড গঠন, বাল্যবিবাহ নিরোধকল্পে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) প্রণয়ন ও জেলা পর্যায়ে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা, শিশু নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য হেল্পলাইন প্রতিষ্ঠা, ষষ্ঠ হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আইসিটি শিক্ষা প্রদান, ধর্ষণের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড প্রদান ইত্যাদি।

অনুষ্ঠানে সাংসদীয় বক্তব্যে শিশুরা প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধির জন্য স্কুলগুলোতে ডিজিটাল ল্যাব ও আইসিটির জন্য পৃথক বাজেট বরাদ্দের দাবি জানায়। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল এবং শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানায় তারা। তাদের সুপারিশ- প্রতিবন্ধী স্কুলগুলোর পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকের সাথে সাথে প্রান্তিক অঞ্চলে বাংলা ভাষাসহ তাদের নিজস্ব ভাষায় দক্ষ এমন শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিশুরা দাবি করে। এছাড়া করোনাকালে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন অত্যন্ত দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিশুদের বাবা-মাকেও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যথাসম্ভব সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছে শিশুরা।  শিশু সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নের জন্য বাজেট ও মানবসম্পদ বৃদ্ধির প্রয়োজন বলে তারা মত প্রকাশ করে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর অপারেশন্স এন্ড সিস্টেম ডিরেক্টর এ এফ এম মইন বলেন, আধুনিক সময়ে নিজেদের কে ডিজিটাল যুগের সময়োপযোগী করে তোলার কোন বিকল্প নেই। ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি একদিকে যেমন সমাজে বৈষম্য প্রতিরোধে কাজ করবে তেমনি তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ শিশু ও যুবদের আধুনিক সময়ের জন্য তৈরি করার উদ্দ্যেশ্যের তাদের ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করে আসছে।

অধিবেশন শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শিশু সাংসদ সদস্যদের বলেন, শিশুদের আইসিটি ও ডিজিটাল শিক্ষার পাশাপাশি ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার ও অনলাইন হয়রানি প্রতিরোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলেন। প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারায় যুক্ত করতে তাদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।  স্থানীয় শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের সহজবোধগম্যতা নিশ্চিতকরণে ভাষাগত জটিলতা কমিয়ে আনা সম্ভব।

তিনি আরো বলেন, বাল্যবিবাহের হার শূন্যে নামিয়ে আনতে সরকার বদ্ধপরিকর এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য ‘চাইল্ড পার্লামেন্ট’ বাংলাদেশে শিশুদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি শিশু সংগঠন যা শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় ২০০৩ সাল থেকে সারাদেশে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত মোট ২২টি চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন সফলভাবে সম্পন্ন শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, অপারাজেয়-বাংলাদেশ, ইয়েস বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল চিল্ড্রেন টাস্ক ফোর্স বাংলাদেশ এই চাইল্ড পার্লামেন্ট অধিবেশন আয়োজনে আর্থিক ও কারিগরী সহায়তা করে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button