নাসিক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র বাদলের স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু, আটক

নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ শাহজালাল বাদলের প্রথম স্ত্রী সাদিয়া ইসলাম নিঝু (৩০) ভরণ পোষন না দেওয়া ও স্ত্রীর অধিকার পাওয়ার দাবিতে গত বছরের আট ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।

রবিবার (মার্চ দুপুরে) শহরের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকায় মেলা ফুড নামক সাত তলা ভবনের পেছনে মিলল সেই নিঝুর রক্তাক্ত দেহ।

স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্য চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনদের দাবি দুপুরের দিকে সে ছাদে যায়। হঠাৎ ছাদ থেকে পড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়।

তবে নিঝুর মৃত্যুকে রহস্যজনক বলছে এলাকাবাসী। বিষয়টি আত্মহত্যা ধারণা করা হলেও মৃত্যুর জন্য নিঝুর স্বামী প্যানেল মেয়র-২ শাহজালাল বাদলকে দায়ী করছেন অনেকে।

অনেকেই বলছেন, স্বামীর অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়ে দশ বছর অপেক্ষার পর সাত তলা ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে দাম্পত্য বিরোধের সুরাহা করলেন জীবন দিয়ে।

এদিকে এ মৃত্যুর ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) প্যানেল মেয়র বাদলকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছে। তবে পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেছেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে।

নিহত সাদিয়া ইসলাম নিঝু চাষাঢ়া এলাকার আলি হায়দার শামীমের মেয়ে। তিনি নিঝু বিউটি পার্লারের মালিক ছিলেন। কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল সিদ্ধিরগঞ্জের নায়াআটি মুক্তিনগর এলাকার নূর সালামের ছেলে।

তিনি বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসাসি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নূর হোসেনের ভাতিজা। চতুর্থ স্ত্রী চাঁদনী আক্তার জ্যুতিকে নিয়ে তিনি তার নির্বাচিত এলাকার নয়াআটি মুক্তিনগরে নিজ বাড়িতে থাকেন।

নিঝুর মা ঝর্না হায়দার জানান, সকালেও আমার সঙ্গে সে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল। বললাম শসা খাও পেপে খাও, বলে এগুলো খেলে মোটা হয়ে যাবে। আমরা একসাথেই ছিলাম। পরে আমি নিচে গেলাম, ও বলল ছাদে একটু হাঁটতে যাবে।

এর কিছুক্ষণ পর ছাদের কিনারে যাওয়ার পরেই সে হয়ত পড়ে যায়। গতকালও ও আমাকে বলেছিল আম্মু আমি ছাদ থেকে পড়ে যেতে নিয়েছিলাম। পারিবারিকভাবে কোনো ঝগড়া বা কোনোকিছু হয়নি। ওর হাই প্রেশার হাই ডায়বেটিস, এখন কি হয়েছে বলতে পারছি না।

এ ব্যাপারে নাসিক ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ বলেন, আমি আমার অফিসে কাজ করছিলাম। তখনই আমার শাশুড়ির ফোন আসে। উনি বলেন তুমি তাড়াতাড়ি আসো, নিঝু ছাদ থেকে পড়ে গেছে। ওর সঙ্গে আমার কোনো কলহ ছিল না।

এই চার পাঁচদিন আগেও নিঝু আমার সঙ্গেই ছিল। তার সঙ্গে আমার কোন দ্বন্ধ নেই। আমার ছেলে এখানে ক্যামব্রিয়ান স্কুলে পড়ে তাই নিঝু এখানেই বেশি থাকত। আমি সবসময় তার খোঁজখবর রেখে আসছি।

নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ফরহাদ জানান, ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, এখন পর্যন্ত নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হবে।

জানা গেছে, বাদলের সঙ্গে নিঝুর বিয়ে হয় ২০০৭ সালে। বাদল সন্তান জন্ম দানে অক্ষম হওয়ায় নিঝু আইভিএফ পদ্ধতির মাধ্যমে এক ছেলে সন্তানের মা হয়। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। ২০১১ সালে কাউন্সিলর হওয়ার পর বাদল বিয়ের নেশায় পরে। একে একে আরো চারটি বিয়ে করেন।

প্রতিবাদ করায় বাদল নিঝুমকে মারধর করে বাড়ী থেকে তাড়িয়ে দেয়। এর পর থেকেই শহরের চাষাঢ়ায় সন্তানকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন নিঝুম। একই ভবনের তিন তলায় নিঝু বিউটি পার্লার চালাতেন। ভরণ পোষন ও কোন খোঁজ খবর নিতো না স্বামী বাদল। সন্তানকে নিয়ে মাঝে মাঝে স্বামীর বাড়ী গেলেও স্ত্রীর অধিকার পেতনা।

স্বামী বাদলের সঙ্গে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হওয়ার পর অনেক চেষ্টা করেও মিল না হওয়ায় গত বছরের আট ফ্রেব্রুয়ারি নিজ বাড়ীতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন সাদিয়া নিঝু। সেদিন স্বামী বাদলের বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া একাধিক বিয়ে, ভরণ পোষণ না দেওয়াসহ নানান অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি।

এছাড়াও কোন স্ত্রী তার বিরুদ্ধে দাঁড়ালে তাকে পাগল ও নেশাগ্রস্থ বলে অপবাদ দেন। স্ত্রীর এসব অভিযোগের বিষয়ে তখন কাউন্সিলর বাদল বলেছিলেন, নিঝু নেশাগ্রস্থ। তার সুস্থতার জন্য রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button