ভারতে মোদি-আদানি সমালোচকদের ওপর চরম প্রতিশোধের খড়গ

ভারতের কংগ্রেস পার্টির নেতা এবং সর্বাধিক পরিচিত বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধীকে দেশটির সংসদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে ২৪ শে মার্চ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেয়ার কেলঙ্কারিতে বিতর্কিত ধনকুবে গৌতম আদানির মধ্যকার গভীর সম্পর্ক নিয়ে লাগাতার সমালোচনা এবং তদন্তের আহ্বান করায় গান্ধীকে একটি মিথ্যা মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার শাসিত এবং নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য গুজরাটের একটি নিম্ন জেলা আদালত।

যদি তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করে জেল এড়িয়ে যানও, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তার কিছুটা বেগ পেতে হবে।গান্ধী বারবার মোদি এবং গৌতম আদানির মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং ক্ষমতার ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। এটি নিয়ে গান্ধী এবং মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্যদের মধ্যে কয়েক সপ্তাহের বাক বিতন্ডার পর একতরফাভাবে এই পর এই রায় দেয় আদালত।

এর আগে, ব্রিটেনে একটি বক্তৃতায় তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রের সঙ্গিণ অবস্থারও সমালোচনা করেছিলেন, যাতে বিজেপি গান্ধীকে বিদেশে দেশকে অপমান করার জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছিল। এবার মোদি-আদানির সমালোচনা বিজেপি সরকারকে রাহুলের সংসদীয় কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। ২০১৯ সালে একটি বিদ্রুপমূলক মন্তব্য করায় কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে গুজরাটে মানহানির মামলাটি করা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন যে, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা থেকে একজোড়া সুপরিচিত পলাতককেও মোদি বলে ডাকা হয়, পশ্চিম ভারতে একটি সাধারণ পারিবারিক নাম। বিজেপির পক্ষ থেকে গান্ধীর জন্য পাল্টা তকমা আসে ‘পাপ্পু (স্বল্পবুদ্ধি)’। তারপরেও, নরেন্দ্র মোদির সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কহীন বিজেপির পাতি সদস্য পূর্ণেশ মোদি অভিযোগ করেন যে, তিনি এবং তার সম্প্রদায় গান্ধীর মন্তব্যে গভীরভাবে আহত হয়েছেন। ২৩শে মার্চ আদালত পূর্ণেশের পক্ষে রায় দেয়।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন গান্ধীকে যে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তা অস্বাভাবিকভাবে কঠোর। এতে ভারতের সংসদ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বহিষ্কার সূচনা করে এমন ন্যূনতম সময়কালীন জেলে আদেশ দেয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ভারতের বিরোধী নেতারা ক্রমশ আইনি জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। অন্য প্রধান বিরোধী দল ‘আম আদমি পার্টি’র দুই নেতা সরকারের কার্যকর করণ অধিদপ্তরের সাথে বিরোধে জড়িয়ে রয়েছেন, যা অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত করে। তবুও গান্ধীর বিষয়টি বিজেপির দ্বারা বিরোধীদের আক্রমণে একটি গুরুতর বৃদ্ধির প্রতিনিধিত্ব করে। তার আপিল সফল হলেও সময় লাগবে। এই সময়টি কংগ্রেসের নেতৃত্বে ধরে রাখার জন্য গান্ধীকে আরও কম কার্যকর করে তুলবে। তাকে জব্দ করার বিষয়টি অন্যান্য বিরোধী নেতারা মোদি এবং বিজেপির সমালোচনায় না যাওয়ার সতর্কতা হিসাবেও বিবেচনা করতে পারেন। তবে, গান্ধীর প্রতি বিরূপ আচরণ ফল বিপরীতমুখীও হতে পারে। সংসদ থেকে তার বিতাড়নের নিন্দা করেছেন অন্যান্য জাতীয় বিরোধী নেতারা, যা সংহতির বিরল প্রদর্শন। এখানে, একমাত্র অসহায়ত্বের শিকার হল ভারতের ক্রমবর্ধমান মোদি-চাপগ্রস্ত গণতন্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *