শিশুদের চুল কেটে দেয়া আওয়ামী লীগ নেতা পেলেন দলীয় মনোনয়ন
আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার মেয়র পদে বিতর্কিত সেই আওয়ামী লীগ নেতা হালিম সিকদারকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। হালিম সিকদার চলতি বছরের ৬ ফেবুয়ারি চুরির অপবাদে তিন শিশুকে মারধরের পর গ্রাম ঘুরিয়ে দুই শিশুর চুল কেটে দেয়ার অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, হালিম সিকদার ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুজ্জামানসহ আরো ৩ জন গোপালদী পৌরসভায় মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
শনিবার টানা তৃতীয়বারের মতো দলের পক্ষ থেকে হালিম সিকদারের নাম ঘোষণা করা হয়। হালিম সিকদারকে শিশু নির্যাতনকারী উল্লেখ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মনিরুজাম্মান বলেন, ‘ হালিম সিকদার একজন চিহ্নিত শিশু নির্যাতনকারী।
শুধু তাই নয় বিষয়টি কাউকে জানালে শিশুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে গ্রাম ছাড়া করার হুমকিও দিয়েছেন তিনি। গণমাধ্যমের খবরে দেশ বিদেশের মানুষ বিষয়টি জেনেছে। আমরা প্রতিবেশি হিসেবে ঘটনার সবকিছু জানি।
ফলে এমন একজন শিশু নির্যাতনকারীকে দলের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারছি না। তাকে মনোনয়ন দেয়ার খবর শুনে এলাকার ভোটাররাও হতভম্ব হয়ে গেছে।’
দেশের দূর্গম এলাকাগুলোও উন্নয়ন বঞ্চিত হয়নি। অথচ আমরা ঢাকার পাশের একটি পৌরসভার বাসিন্দা হয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত। কোন মুখ নিয়ে এমন একজন মানুষের জন্য আমরা ভোটারদের কাছে যাবো। তাছাড়া গোপালদীর মানুষ একজন শিশু নির্যাতনকারীকে ভোট দেবে না।
তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের মাঠে থাকবো।’
এছাড়াও এই পৌরসভায় স্থানীয় ব্যবসায়ী তানভীর হোসেন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের মাঠে আছেন। ‘তানভীর হোসেন বলেন, মাত্র দুইমাস আগেই এতো বড় একটি ঘটনা ঘটলো। স্থানীয় মানুষ বিষয়টি নিয়ে এখনো ক্ষুব্ধ। এরই মধ্যে এমন একজন ব্যক্তির আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া দলের সমর্থক হিসেবে আমাদের জন্য হতাশার।’
তিনি আরো জানান, হালিম সিকদার মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে আমাকেসহ আমার পরিবারের সকলকে হুমকি দিয়ে আসছে। যাতে আমি স্বতন্ত্র নির্বাচন থেকে সরে আসি। তার ক্যাডার বাহিনী নুর মোহাম্মদ এই সকল হমকি দিয়ে আসছে।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে চুরির অপবাদে আড়াইহাজারে রামচন্দ্রদী বাজারে ৭, ৮ ও ১১ বছর বয়সী তিন শিশুকে মারধরের পর হাত বেঁধে গ্রাম ঘুরিয়ে দুই শিশুর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়।
এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মামলা ও হামলার হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠে মেয়রের বিরুদ্ধে।
এই নিয়ে দেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে দেশ বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ঘটনার তদন্ত করা হয়। মেয়রের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তদন্তের ভার নেয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) তাপস কান্তি রায় মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘মেয়রসহ মামলার সব আসামি এখন জামিনে আছেন। আমরা শীঘ্রই মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেবো।’
এদিকে হালিম সিকদার ফের দলীয় মনোনয়ন পাবার পর নির্যাতনের শিকার শিশুদের পরিবার বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কে আছেন। রোববার তিন শিশুর মধ্যে দুই শিশুর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে দুই শিশুর তিনজন আত্মীয় জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষুব্ধ। কিন্তু কোথাও কথা বলতে পারছেন না।