রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় তেলাপোকা মারার স্প্রে করার পর দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন শিশু দু’টির বাবা মোবারক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমার দুই সন্তানকে তুলে নিয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ ভালো জানেন। কিন্তু ফুটফুটে দুই শিশুর এভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যাদের কারণে দুই সন্তান হারিয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হোক। আমি চাই সুষ্ঠু বিচারে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। যেন আর কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়।’
বাসাটিতে যে পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা স্প্রে করেছিলেন সেই ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার (৮ জুন) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন অর-রশীদ। এই সংবাদ সম্মেলনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন শিশু দুটির বাবা মোবারক হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর-রশীদ জানান বাসাটিতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট সমৃদ্ধ পেস্টিসাইড স্প্রে করা হয়েছিল। বড় গার্মেন্টস, গুদাম বা অনাবাসিক জায়গাতে এই পেস্টিসাইড স্প্রে করা যায়। কিন্তু ঘরে এটা ব্যবহার করা যায় না। করলেও আবাসস্থল ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়।
এ পেস্টিসাইডে রাসায়নিক আইটেম সঠিক অনুপাতে ছিল না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। গত ২ জুনের এ ঘটনায় গত ৫ জুন ভাটারা থানায় একটি মামলাও হয়েছে।
হারুন অর-রশীদ বলেন, ঘটনার পরই মূল আসামি ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং কোম্পানিটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন গা ঢাকা দেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা টের পেয়ে দু’জনই টাঙ্গাইল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। অবশেষে আজ সকাল পৌনে ৮টার দিকে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার হন ডিসিএস অর্গানাইজেশন লি. কোম্পানির চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফরহাদুল আমিন।
ডিবি প্রধান বলেন, কীটনাশক মানব জীবনের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বিশেষত তীব্র দাবদাহের এই সময়ে বিষয়টি উপলব্ধি করা দরকার ছিল পেস্টিসাইড কোম্পানির কর্মকর্তাদের। কিন্তু অর্থের লোভে কোম্পানির মালিক-কর্মচারীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির এই বিষয়টিকে উপলব্ধি না করে এবং পরিবারের সদস্যদেরকে যথাযথ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার উপদেশ না দিয়েই আনাড়ি কর্মচারীদের দিয়ে এই কীটনাশক স্প্রে করিয়েছেন। যার ফলশ্রুতিতে দুইটি শিশুর জীবন ঝরে যায় অকালে। অসুস্থ হন পরিবারের অন্য সদস্যরাও।
যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই বিষাক্ত পণ্য কোথা থেকে কিভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে, এর অনুমোদন ছিল কি না, এর রাসায়নিক অনুপাত সঠিক ছিল কি না, মানবদেহের জন্য এগুলো কতটা ক্ষতিকর তা যাচাই-বাছাই করা হবে।
পুলিশ ও নিহত দুই শিশুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২ জুন বসুন্ধরার আই ব্লকের একটি নতুন বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসের কর্মীরা তেলাপোকা মারার বিষ স্প্রে করেন। এর দুদিন পর ভুক্তভোগী পরিবারটি ওই বাসায় ওঠে। বাসায় প্রবেশ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরে তাদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে ৪ জুন ভোরে প্রথমে শাহিল মোবারত জায়ানের মৃত্যু হয়। পরে রাত ১০টায় মারা যায় শায়ান মোবারত জাহিন (১৫)। দুই শিশুর মা শারমিন জাহান লিমা ও বাবা মোবারক হোসেনও বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন আছেন।