‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: স্বস্তির সন্ধানে’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

রাজধানীর সেন্টার অন ইন্টেগ্রিটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (সিরডাপ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: স্বস্তির সন্ধানে’ শীর্ষক এই সভার আয়োজক বণিক বার্তা ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন (ডিবিএম)।

এমএম আকাশ বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠালে দুই টাকা করে প্রণোদনা দিচ্ছেন। এই সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে এখানকার ধনীরা। দেশ থেকে টাকা পাচার করে আবার তা রেমিটেন্স হিসেবে দেশে আনছে, লাভবান হচ্ছে তারাই। ফলে পুরো প্রক্রিয়া একটা চক্রের মধ্যে পড়ে গেছে। রেমিটেন্সে সরকারের দেয়া দুই শতাংশ প্রণোদনার সুবিধা অবৈধভাবে ধনীরা নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ। সদ্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আজ মঙ্গলবার (১৩ জুন) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

আরো বলেন, দেখা গেল, দুই টাকা ইনসেনটিভ দেয়ার পর আমেরিকা থেকে রেমিটেন্স আসা শুরু হলো। অথচ এর আগে রেমিটেন্স আসতো সৌদি আরব থেকে।

অধ্যাপক ড. এমএম আকাশ বলেন, নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে এই বাজেট। এরই মধ্যে সরকার আন্তর্জাতিক রাজনীতির টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। এই সময়ে আন্তর্জাতিক নির্ভরতা থেকে বের হতে চাইলে ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন আনতে হবে। একটা পক্ষ নিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। চীনের কয়লা আসছে, এর মানে কী? আমি যদি কয়লা আমদানির টাকা না পাই তাহলে চীনের কাছ থেকে নেবো। চীন থেকে নিলে আবার আমেরিকা-ভারত অখুশি হবে। এই টানাটানির মধ্যে সরকার পড়েছে। আবার চীন যদি কয়লা না দেয় তাহলে সমস্যায় পড়ে যাবে।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সার খাদ্যপণ্য, জ্বালানির দাম কমলে আপনারা এগুলোর দাম কমাবেন, কিন্তু দাম তো কমেনি। আইএমএফের নীতি অনুযায়ী, ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হবে। আপনারা করোনাকালে যে ভর্তুকি দিয়েছেন তার চেয়ে আর কমাতে পারবেন না। পরিস্থিতি এখনো অত ভালো হয়নি, সব জায়গায় এখনই ভর্তুকি কমানোর সময় হয়নি।

অনুষ্ঠানে গ্লোবাল টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বাজেটের বড় সমস্যা হলো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার খুবই অভাব। এনবিআরের একটা অবিশ্বাস্য আয় দেখানো হয়, তার ওপর ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য কোথাও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না, সংসদে এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। এনবিআর কেন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারল না এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন হয় না।

প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডিবিএমের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা। তিনি বলেন, আটটি বিষয়ের জন্য এ বাজেট দুঃসময় বা অস্বস্তির কাল। সেগুলা হলো রেকর্ড মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, রিজার্ভ বা ডলার সংকট, উৎপাদন, সরবরাহ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, রাজস্ব আয় হ্রাস, দেশী-বিদেশী সুদ পরিশোধে বাড়তি চাপ, কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব, নিন্মবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের খাদ্য, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক ক্ষেত্রগুলোর সংকোচন।

সভায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বণিক বার্তার চীফ রিপোর্টার বদরুল আলম, অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্ল্যা, নাগরিক উদ্যোগের দলিত অধিকার কর্মসূচি প্রকল্প সমন্বয়ক এবিএম আনিসুজ্জামান, কেয়ার বাংলাদেশ জানো প্রকল্পের পরামর্শক আকরাম আলী, ডিবিএম নির্বাহী পর্ষদের সদস্য জাকিয়া শিশির, দ্য আর্থ সোসাইটির কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোসলেহউদ্দিন সূচক, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এফজিজি কর্মসূচি ব্যবস্থাপক এ কে আজাদ, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্স রাইটসের প্রোগ্রাম অফিসার মো. রাজু আহম্মেদ মাসুম, বিলসের পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, সেফটি অ্যান্ড রাইটস্ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রোগ্রাম অফিসার মো. সিজুল ইসলাম ও ইকনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন বাবলু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button