সম্প্রতি ডিসি পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, মেধাবী, উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী অফিসারদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যাদের ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তারা বিভিন্ন সরকারের শাসন আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত। সুতরাং দলীয় বিবেচনায় নিয়োগের দাবি অযৌক্তিক। তাছাড়া নিয়োগের আগে ডিসিদের ফিট লিস্ট তৈরি করা হয়। একাধিক ভাইভা ফেস করতে হয়। অনেকের মধ্য থেকে তাদের বাছাই করা হয়।
রোববার সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট ফেরামের আয়োজেনে বিএসআরএফ সংলাপে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চলনায় এবং সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপ অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ডিসিদের অনেকে খুবই মেধাবী কর্মকর্তা; কিন্তু লিডারশিপ কোয়ালিটি দুর্বল। অনেকে আছেন লিডারশিপ কোয়ালিটি এবং লেখাপড়ায় ভালো এমন অফিসারদের বেছে নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। যারা কাজে দুর্বল অর্থাৎ ডেস্কে যেভাবে কাজ করেছেন, ডিসি হিসেবে সেভাবে কাজ করতে পারছেন না- এমন কর্মকর্তাদের মাঠ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, যাদের তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে ২০ জন ছিল ২২ ব্যাচের। আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই ২২ ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব হয়ে যাবেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে কিছু অভিযোগ ছিল, অভিযোগগুলো দেখেছি। জনমনে বেশকিছু অস্বস্তি আছে, সেজন্যই আমরা তুলে নিয়েছি। নিয়মের বাইরে, আইনের বাইরে, বিধিবিধানের বাইরে কিন্তু কোনো কিছু করিনি।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ডিসি কিন্তু একদিনে হয় না। মাঠ প্রশাসনে তাদের দুই বছর কাজ করতে হয়।
প্রতিমন্ত্রীর দাবি, প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রতিনিয়তই উন্নত হচ্ছে, ভালো হচ্ছে; এ ভাবমূর্তির উন্নয়ন হওয়ার গতিধারা যেন ঠিক থাকে সেজন্য আমরা এ কাজগুলো করি। যোগ্যতা অনুযায়ী তাদের কতটুকু প্রশিক্ষিত করেছি, সে অনুযায়ী তাদের পদায়ন করে থাকি। সেজন্য এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই, কারণ রাতারাতি কেউ ডিসি হয় না। আমি চাইলেই পলিটিক্যাল কাউকে ডিসি করতে পারব না।
তিনি বলেন, সরকারের পলিসি রয়েছে, আমরা জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে চাই। সেটার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। প্রফেশনালিজম যেটি সেটি শো করবেন। আপনাদের যে উন্নত ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে সেই ট্রেনিং অনুযায়ী জনগণকে সেবা করবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে কাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে সেটি জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে।
ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার যেভাবে চাইবেন সেভাবে চলবে। আমাদের তরফ থেকে আমরা একটি নির্বাচন সুন্দর করার জন্য যতটুকু সহযোগিতা করা দরকার ততটুকু করছি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। বাছাই করে সেরা অফিসারদের সেখানে দেওয়া হয়েছিল। ভালো কর্মকর্তাদের ডিসি করা হচ্ছে। এখানে কোনো পক্ষপাতিত্ব করা হয়নি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তারা জনসেবায় ব্রত হবেন। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের সেবা ও উন্নয়ন নিয়ে যাবেন। সাধারণ মানুষের মন-মর্জি বুঝে কথা বলবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা এসব কাজ করছেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ভুল করেন। তখন আমরা সুধরে দিই। অনেক ক্ষেত্রে শান্তি আরোপ করা হয়। আবার যারা বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েন তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।
তিনি বলেন, আমারা চেষ্টা করেছি, প্রশাসন যেন জনবান্ধব হয়। কারণ জনগণ দেশের মালিক। ক্ষমতার মালিক। জনপ্রশান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ধরণের কাজ তুলে ধরে ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রশিক্ষণ দেওয়া, কর্মকর্তাদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করতে তার মন্ত্রণালয় কাজ করে।
চাকরির আবেদনে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্তকর্তার সত্যায়ন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে সত্যায়ন থাকবে না। এনআইডি কার্ডে সবকিছু সংযোজনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোটার আইডি কার্ডে সার্টিফিকেটগুলোর যাবতীয় তথ্য দেওয়া থাকবে। চাকরি প্রার্থী কোথায় কোথায় লেখাপড়া করেছেন, মেইন সার্টিফিকেট এনআইডি সার্ভেরে ঢুকলে বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট গর্ভনমেন্টস বা সরকার ব্যবস্থা চালু হবে।