কলাম – সুশাসনের জন্য তথ্য অধিকার আইন
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মানবাধিকার। তথ্য অধিকার অর্থ কোন কর্ত্রীপক্ষের নিকট হতে তথ্য প্রাপ্তির অধিকার। তথ্য অধিকার আইন নাগরিকদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করে বলে এটি একটি স্বতন্ত্র আইন। এই আইনের অন্যতম শক্তি হল, সরকারের উপর নাগরিকদের প্রাধান্য নিশ্চিত করা।
১৭৬৬ সালে সুইডেন প্রথম তথ্য অধিকার আইন পাস হয়। যার উদ্দেশ্য ছিল, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা তারসাথে আদালত ও সংসদে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বিষয়ে জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা। দেশের সংবিধান মতে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। তাই জনগনের তথ্য চাওয়ার এবং পাওয়ার দুই অধিকারই আছে। তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তথ্য কমিশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এটি একটি পরিপূর্ণ আইনি সংস্থা।
২০২০ সালে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় মোট ৯৭৯৭টি দরখাস্থ জমা পরে। যার মধ্যে ৯৩৮৭ টির তথ্য অর্থাৎ আটানব্বই দশমিক বিরাশি শতাংশ নাগরিক তথ্য পেয়েছেন। মোট জন-সংখ্যার তুলনায় দারখাস্ত অতি কম হলেও বিষয়টি ইতিবাচক। তথ্য অধিকার ছাড়া নিগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। গনতান্ত্রিক অনুশিলনের জন্যও তথ্য অধিকার আইনের বিকল্প নেই।
আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তথ্য অধিকার আইন অন্যতম নিয়ামক হিসাবে কাজ করতে পারে। সকল উন্নয়ন কার্যক্রম বিশেষকরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর তথ্য আপামর জনগণ এই আইনের মাধ্যমে জানতে পারেন।
প্রশ্ন হল, জনগণ কি সকল প্রকার তথ্য চাইতে পারবেন? উত্তর হল না। আইনের ৩২(১) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়জিত ০৮ টি গোয়েন্দা সংস্থাকে এই আইনের আওতা বহির্ভূত রাখা হয়েছে। তবে দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার ক্ষেত্রে এ সকল সংস্থার নিকটও তথ্য চাওয়া যাবে। এই আইনের মাধ্যমে সারকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রাপ্ত তথ্য কর্ম-কর্তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট ফর্মে জনগণ তথ্য চাইতে পারবেন।
মদ্দাকথা হল, তথ্য কমিশন নিয়মিত অনলাইন অফলাইন প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ পরিচালনা করে আসছে। তারপরেও প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক সরকারি বেসরকারি অফিস তথ্য অধিকার আইন সম্পর্ক জানেন না। মুলত আইনটির বিষয়ে ব্যাপক আকারে প্রচারণার অভাব রয়েছে। জনগনের মাঝে এক প্রকার ভিতী রয়েছে তারা মনে করেন তথ্য চাইলে জন প্রতিনিধির সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। যার জন্য আইন বিষয়ে অবগত হয়েও অনেক তথ্য জানতে চান না। এখানে তথ্য কমিশন ও পাশাপাশি সছেতন নাগরিক ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বড় ভুমিকা পালন করতে পারে।
অবাধ তথ্য সরবরাহ, জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার আইন গুরুত্বপূর্ণ। তাই আইন সম্পরকে সঠিক ধারণা থাকা অতীব প্রয়োজন। আইনটি পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। অথিকার ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে তথ্য অথিকার আইন এর পর্যাপ্ত ব্যবহার নতুন বাংলাদেশ দেখাতে পারে।
লিখেছেন
মোহাম্মাদ ইয়াসিন আরাফাত
উন্নয়ন কর্মী ।