চায়না-বাংলাদেশের ব্যবসায়িক উন্নয়নে বিকেএমইএ ভবনে মতবিনিময় সভা

ব্যবসায়িক উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি-টেক্স) ও চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটির সাথে এক মতবিনিময় সভা করেছে বিকেএমইএ। সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় অবস্থিত বিকেএমইএ’র হেড অফিসে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভার সভাপতিত্ব করেন বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি ফজলে শামীম এহসান। বিকেএমইএ’র পক্ষে এসময় উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সহ সভাপতি অমল পোদ্দার, মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, আখতার হোসেন অপূর্ব, মোহাম্মদ রাশেদ।

চাইনিজ এসোসিয়েশনের পক্ষে এসময় উপস্থিত ছিলেন- চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ এর সভাপতি মি. মাইক, চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটির পরিচালক মি. ওয়াং যেং, চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্ট এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. ইয়াং ডনঘুয়া ইউনিভার্সিটি (দ্য স্কুল অফ টেক্সটাইলস) এর ডিন (অধ্যক্ষ) মি. ওয়াং সিনফ্যাং। এছাড়া এসময় উপস্থিত ছিলেন- ৩১টি প্রতিষ্ঠানের মোট ৪২ জন প্রতিনিধি।

সভার শুরুতে আগত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানায় বিকেএমইএ’র নেতৃবৃন্দ। পরে অতিথিদের নিয়ে ছবি তুলেন তারা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভাপতির বক্তব্যে ফজলে শামীম এহসান বলেন, আমাদের কারখানাগুলো হবে আরও টেকনোলজি সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, তবে এখনো বিশ্ববাজার আমাদের অবস্থান পোক্ত করতে পারিনি। এবং সে অবস্থার পোক্ত করতে আমাদের চায়নার প্রয়োজন। এছাড়া, আমাদের শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে আমাদের চাইনিজ টেকনোলজির প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, সেই সাথে চাইনিজ নতুন নতুন সুতা এবং নতুন নতুন কাপড়, আমাদের দেশে উৎপাদন করা জরুরী বলে আমি মনে করি। ঐতিহাসিকভাবেই চাইনিজ ইনভেস্টরদের আমরা আমন্ত্রণ করে থাকি।

আখতার হোসেন অপূর্ব বলেন, বাংলাদেশের নিটওয়্যার শিল্পের চাহিদা মেটাতে শিল্প রাসায়নিক, কাঁচামাল, উচ্চ পর্যায়ের কাপড়ের পাশাপাশি আনুষাঙ্গিক জন্য বাংলাদেশ মোটামুটিভাবে চীনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সময়ে সময়ে, বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা আমদানি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং শেষ পর্যন্ত পুরো রপ্তানি প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। এই ক্ষেত্রে, চীন কর্তৃক বাংলাদেশে বন্ডেড গুদাম স্থাপন করা বাংলাদেশী নিটওয়্যার উদ্যোক্তাদের জন্য কাঁচামাল এবং অন্যান্যের ধারাবাহিক সরবরাহ নিশ্চিত করবে। এটা হবে বাংলাদেশ ও চীন উভয়ের জন্যই জয়-জয় পরিস্থিতি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশী নিটওয়্যার সংস্থাগুলি, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলি সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তিগত আপগ্রেডের জন্য তহবিল চাইছে। এই পটভূমিতে, আফ্রিকান টেক্সটাইল শিল্পে অভিজ্ঞ চীনা বিনিয়োগকারীরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের নিটওয়্যার সেক্টরে যৌথ উদ্যোগ এবং বিনিয়োগ অনুসন্ধান করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার নারায়ণগঞ্জের তিনটি নদীর মোহনায় অবস্থিত শান্তির চরের ১৫০০ একর এলাকা বিকেএমইএ-এর জন্য নিটপল্লী নামে একটি বিশেষায়িত নিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য নির্ধারণ করেছে। বিকেএমইএ’র অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রাথমিক তহবিল বিনিয়োগের প্রয়োজন। চীন পারস্পরিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই মহান উদ্যোগের অংশীদার হতে পারে, যা উভয় পক্ষের জন্য পারস্পরিকভাবে উপকারী হবে।

মি. ওয়াং যেং বলেন, আমরা চায়না থেকে এসেছি বাংলাদেশের ব্যবসা দেখার জন্য এবং তাদের সাথে ব্যবসা বৃদ্ধি করার জন্য। আমাদের সাথে অনেকগুলো গ্রুপ আছে। সবাই তৈরি পোশাক সম্পর্কে জানতে চায়। আমাদের দেশের তৈরি পোশাক উৎপাদনের যে উন্নত টেকনোলজি আছে সেগুলোকে আমরা বাংলাদেশে আনার চেষ্টা করছি। আমরা তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য যেসব টেকনোলজি তৈরি করেছি সেগুলো বাংলাদেশের নিয়ে এসে একসাথে ব্যবসা করতে চাই।

এশিয়ার মধ্যে পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে আছে তাই আমরা এখানে এসেছি। বাংলাদেশে অনেক জায়গা আছে যেখানে যেগুলো কাজে লাগালে বাংলাদেশ ডেভলপ হবে। আমরা চাচ্ছি এখানে আমরা আসবো নিজেদের ডেভলপ করবো এবং এই কারণে আপনাদের সাহায্য দরকার।

ডংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব টেক্সটাইল অনুষদের ভাইস ডিন ওয়াং জিয়াফেং বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের উন্নয়নে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। বিকেএমইএতে এই সফর আমাদের জন্য সহায়ক হবে। একই বিষয় নিয়ে গবেষণার জন্য এদেশে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সুতরাং জ্ঞান বিনিময়ে দেশ দুটি পরস্পরের সহায়ক হতে পারে।

চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল কাউন্সিলের পরিচালক ইয়ং ইয়াং বলেন, চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি অধীনে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। টেকনোলজির বিকাশে পারস্পারিক জ্ঞান বিনিময় খুবই দরকার। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি।

বাংলাদেশ ও চায়না একসাথে কাজ করলে দুই দেশেরই অনেক এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মতামত ব্যক্ত করেন চাইনিজ ডেলিগেটররা।

সিআবের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, চায়না টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সোসাইটি, সিএনট্যাক ইউনাইটেড টেস্টিং সার্ভিস, চায়না ন্যাশনাল গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন,জিনজিয়াং কেমিক্যাল ফাইবার, জিয়াংসু জেম রিসার্চ ইনস্টিটিউট, চ্যাংঝু মিশেং বায়োমেট্রিক, সুঝউ জিনমিং টেকনোলজি,ইয়ানচেং পলিটেকনিক কলেজ,আমেরিকান অ্যান্ড ইফার্ড, ঝেঝিয়াং ফেংলিং গ্রুপ, চংকিংপ্রিন্টিং ডাইং, চেংডু টেক্সটাইল কলেজ, ফুজিয়ান ডংলং নিটিং,ফুজিয়ান হুয়ান নিউ মেটেরিয়াল টেকনোলজি, ইমপ্যাক টেস্টিং টেকনোলজি, শাওজিং ঝেনইয়ং টেক্সটাইল, রেফং ইকুইপমেন্ট, জামেন এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি,নাপা কেমিক্যাল, শাওজিং ইয়াংশি টেক্সটাইল, ঝ্যাংঝউ হেরুই অ্যাডিটিভ, কোয়ানঝু হিলুন ওয়েভিং, শিশি শাংলি টেক্সটাইল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি,হিকারি প্রিসাইজ মেশিনারি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি,গুয়াংডং কোয়াটারনিয়ান টেকনোলজি লিমিটেড,গুয়াংডং দাইশি জিপার, গুয়াংজু জাইক্সিয়ান ক্লথিং টেকনোলজি, সিটিইএস রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ইলিয়নট্যাক, ইউনাইটেড টেস্টিং সার্ভিসেস, উইজি ইউয়ানচেং মেশিনারি, চায়না টেক্সটাইল ম্যাগাজিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button