Trending

ডাক্তার বাশার আল-আসাদ: লাজুক চিকিৎসক থেকে ইতিহাসের এক নৃশংস শাসক

মতামত দিয়েছেন; তাহজিব চৌধুরী

৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১;০৩

১৪ বছরের মুয়াবিয়া জানতো না যে তার একটি গ্রাফিতি কেবল তার নিজের জীবন নয়, পুরো জাতির ভবিষ্যৎ বদলে দেবে। দারা শহরের এক স্কুলের দেয়ালে তার লেখা “It’s your turn, Doctor!” কথাটি ছিল সিরিয়ার স্বৈরাচারী শাসক বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে একটি কিশোরের প্রতীকী প্রতিবাদ। এই ছোট্ট ঘটনার সূত্রপাতেই শুরু হয় সিরিয়ার এক ভয়াবহ অধ্যায়—যা ইতিহাসে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

১৯৭০ সালে হাফেজ আল-আসাদ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। তিনি সিরিয়ায় একনায়কতান্ত্রিক শাসনের প্রবর্তন করেন, যা প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে আসাদ পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল। হাফেজের পরিকল্পনা ছিল তার বড় ছেলে বাসেল আল-আসাদকে পরবর্তী উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তোলার।

সিরিয়ার রাজ প্রসাদের ক্ষমতার দৌঁড়ে বাশার আল আসাদ কোনকালেই ছিলেন না। আশির দশকে হাফেজ আল আসাদের অন্যতম উত্তরাধিকার ছিলেন তার ভাই রিফাত আল আসাদ। তবে ৮৪’সালে হাফেজ কোমায় থাকা অবস্থায় রিফাত ক্যু ঘটানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এবং নির্বাসিত হন। ঐ সময় থেকেই হাফেজ তার জেষ্ঠ্যপুত্র বাসেলকে তৈরি করতে থাকেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও সামরিক বিদ্যায় পিএইচডি করা বাসেল আবির্ভূত হন ক্ষমতার দৌঁড়ে। তাকে ডাকা হত গোল্ডেন প্রিন্স নামে।

কিন্তু ৯৪’সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় বাসেল নিহত হলে বিলেতের চক্ষু ডাক্তার, স্বভাবে লাজুক বাশারকে অনেকটা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসা হয় সিরিয়ায়। ২০০০’সালে হাফেজের মৃত্যুর পর সংবিধান পরিবর্তন করে ৩৫ বছর বয়সী বাশারকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়।

তবে কথিত আছে বাসেলের মৃত্যুর পর সিরিয়ান রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখেন তাদেরই বোন ডা: বুশরাহ আল আসাদ।বাশারের অন্যতম থিংকট্যাঙ্কও বলা হয় তাকে। বাসেলের মৃত্যুর পর তিনি বাশারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

ক্ষমতা এবং রাজনীতি খুব অদ্ভুত এক ব্যাপার। নয়তো কোনোদিন রাজনীতিতে আসতে না চাওয়া কিংবা চক্ষু চিকিৎসক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া সিরিয়ান তরুণ সময়ের পরিক্রমায় একসময়ের লাজুক বাশার হয়ে উঠেন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গণহত্যাকারীদের একজন।

নিজ দেশের নাগরিকদের উপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার উপর।২০১৩ সালে ঘৌতা শহরে সারিন গ্যাস হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়, যার অধিকাংশই ছিল শিশু।

গতকাল বাশার পালানেন, সেই সাথে যবনিকাপাত ঘটলো আসাদ পরিবারের ৫৩ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের। সিরিয়াকে তিনি রেখে গেলেন ধ্বংসস্তুপ করে।

সেই ১৪ বছরের ছোট্ট মুয়াবিয়া এখন ২৭ বছরের পরিণত তরুণ। সিরিয়ার মুক্তি সংগ্রামের এক শ্রেষ্ঠ গেরিলা। মুয়াবিয়ারা কি নতুন সিরিয়া গড়তে পারবেন কিনা তা সময়ে বলবে। তবে হাসিনা ওয়াজেদের মত বাশারের পালিয়ে যাওয়াকে সিরিয়ানরা এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে সেলিব্রেট করবে নিঃসন্দেহে।

বাশার আল-আসাদের শাসন ছিল নির্মমতার প্রতীক, যা সিরিয়ার মাটিকে রক্তে ভাসিয়েছে। তবে তার পতন একটি নতুন সূচনার সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সিরিয়ার জনগণ, বিশেষ করে মুয়াবিয়ার প্রজন্ম, একটি স্বাধীন, ন্যায়ভিত্তিক, এবং গণমানুষের রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছে। তাদের এই যাত্রা সফল হবে কিনা তা নির্ভর করছে ঐক্য, দৃঢ়তা এবং সঠিক নেতৃত্বের ওপর।

ঢাকা থেকে দামেস্ক
ইনকিলাব জিন্দাবাদ

 

রিপোর্ট; মুমতাহিনা চৌধুরী -করেসপনডেন্ট চট্টগ্রাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button