Trending

ফিরে আসছে বাটন ফোন!

ফারিহা তাসনীম- জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৮

প্রথমদিকে, মোবাইল ফোন ছিল শুধুমাত্র কথা বলার এক সরঞ্জাম, তবে সময়ের সাথে সাথে এটি হয়ে উঠেছে এক বিশাল প্রযুক্তি ডিভাইস, প্রায় কম্পিউটারের সমতুল্য। এই ডিভাইসগুলোকে বলা হয় স্মার্টফোন। আগের জেনারেশনের ফোনগুলোর তুলনায় স্মার্টফোনের ডিজাইন, ওজন, এবং ফিচার—সবই আলাদা।

তবে এত আধুনিক প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও কেন মানুষ আবার বাটন ফোনের দিকে ঝুঁকছে?

বিশ্বাস করুন বা না করুন, কিন্তু বাস্তবতা এই যে, স্মার্টফোন আমাদের জীবনযাত্রার গতি কমিয়ে দিচ্ছে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ গড়ে ৪.৮ ঘণ্টা স্মার্টফোনে সময় ব্যয় করছে। তরুণদের ক্ষেত্রে এই সময়টা আরো বেশি হতে পারে। এটি একটি উদ্বেগজনক তথ্য, কারণ মানুষ তার জীবনের প্রায় এক চতুর্থাংশ সময় স্মার্টফোনে অপচয় করছে।

এছাড়া, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। স্মার্টফোন থেকে তথ্য পাচারের ঘটনা বিশ্বজুড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ কারণেই মানুষ বাটন ফোনের প্রতি আবার আগ্রহী হয়ে উঠছে।

সিমরাশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গুগলে বাটন ফোনের জন্য সার্চের পরিমাণ ৮৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এটি শুধু গুগল সার্চেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী বিক্রিত বাটন ফোনের সংখ্যা ছিল ৪০ কোটি, আর ২০২৪ সালে সেটি বেড়ে দেড়শো কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তবে, মানুষের এই পরিবর্তিত মনোভাবের কারণ কী?

লন্ডনের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর ডালসি কাউলিংয়ের অভিজ্ঞতা শোনা যাক। একদিন তিনি তার দুই ছেলেকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লক্ষ্য করেন, প্রায় ২০ জন অভিভাবকই নিজেদের স্মার্টফোনে স্ক্রল করে যাচ্ছেন, এবং তার নিজেকেও ফোনে ঘুরতে দেখা যায়। এই দৃশ্য তাকে গভীরভাবে ভাবায়। তার মতে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানে একদিকে যেমন মনোযোগের ক্ষতি, তেমনি মস্তিষ্কের উপরও বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। তাই তিনি কোভিড মহামারীর সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহার পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।

এটি তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল। স্মার্টফোন ছাড়া সময় তিনি বই পড়া বা আরও কিছুটা ঘুমানোর জন্য ব্যয় করতে চেয়েছিলেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। অন্যান্য উন্নত দেশগুলোতেও এই চিত্র প্রায় একই।

২০০০ সালে নোকিয়া ৩৩১০ মডেলটি ছিল বাজারে অন্যতম জনপ্রিয় মোবাইল ফোন। স্মার্টফোনের যুগেও বাটন ফোনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, নোকিয়া ২০১৭ সালে এই মডেলটি পুনরায় বাজারে আনে।

এখন, স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বাটন ফোনে ফিরে আসা একটু চ্যালেঞ্জিং হলেও, সামাজিক সম্পর্ক রক্ষা, কর্মঘণ্টা বাড়ানো এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণ সীমিত রাখা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button