মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো এনভায়রনমেন্ট ইনোভেশন সামিট

 

মোঃমীমরাজ হোসেন :দেশের ৭০টির বেশি সংগঠনের প্রায় ৪ শতাধিক পরিবেশ কর্মীর অংশগ্রহণে শনিবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো এনভায়রনমেন্ট ইনোভেশন সামিট ও এ্যাওয়ার্ড ২০২৪। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে পরিবেশবান্ধব নানান উদ্ভাবন তুলে ধরার পাশাপাশি প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন দেশের খ্যাতনামা গবেষক, পরিবেশবিজ্ঞানীরা। সামিটে গার্মেন্টেসের ফেলে দেওয়া কাপড় দিয়ে বানানো জামা পরে ফ্যাশন শোতে অংশ নেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ ও একদল শিক্ষার্থী। সমাপনীতে পরিবেশ ও জলবায়ু সহনশীল নানান উদ্ভাবন ও কাজের জন্য এ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় ১০ টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে।

তরুণদের পরিবেশবাদী সংগঠন মিশন গ্রিন বাংলাদেশ ও জেসিআই ঢাকা মেট্রোর আয়োজনে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় এই এনভায়রনমেন্ট ইনোভেশন সামিট ও এ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম।

সকালে এই সামিটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুইডেন দূতাবাস, ঢাকা-এ প্রথম সচিব (পরিবেশ ও জলবায়ু) এবং সহযোগিতা বিভাগের উপ-প্রধান নায়োকা মারটিনেজ ব্যাকস্ট্রম। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ সামিট ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আপনাদের সাথে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সুইডেন সরকার পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্থায়ী উন্নয়ন নিয়ে যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছে, তা শুধু আমাদের দেশের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বে আমাদের অংশীদারদের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেশন ও প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে (ইয়্যুথ প্যানেল: টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ প্রজন্মকে ক্ষমতায়ন, জাস্ট এনার্জি প্যানেল – বাংলাদেশে ন্যায্য শক্তি স্থানান্তরে উদ্ভাবনী সমাধান, পরিবেশ ও সাসটেইনেবল প্যানেল- পরিবেশ ও ইনোভেশনে সিএসআর কিভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষজ্ঞদের প্যানেল – পরিবেশগত উদ্ভাবনী ধারণাগুলিকে কর্মে পরিণত করা) অনুষ্ঠিত হয়।

দুপুরে বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্ত্যবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের পরিবেশ আমাদেরই ঠিক করতে হবে। আর তা আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়েই আমাদের পরিবেশ ঠিক করতে হবে। পরিবেশগুলো সমস্যাগুলোর সমাধান করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা চলমান আছে। এ ধরণের গবেষণাগুলো যেন আরো বেশি বেশি হয়, সে বিষয়ে আমি উদ্যোগ নিয়েছি।’

বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে অনলাইনে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘পরিবেশ আমাদের জীবনের সাথে মিশে থাকা একটি বিষয়। পরিবেশ কোন সস্তা বিষয় নয়। আর আগামী দিনের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জগুলো তরুণরাই মোকাবেলা করবে। পরিবেশের সাথে ভারসাম্য রেখেই আমাদের সকল ধরণের উন্নয়ন কার্যক্রম করতে হবে। আমি আমার মন্ত্রণালয়ের সবকিছুতেই তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতত করেছি। আমার বিশ্বাস নতুন বাংলাদেশের মতো সবুজ বাংলাদেশ গড়তেও তরুণরা অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে।’

এছাড়াও অনান্যদের আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টার ড. আলী আফজাল, জেসিআই বাংলাদেশের সভাপতি ইমরান কাদের, ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি)কমিউনিকেশনস প্রধান মো. আব্দুল কাইয়ুম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর, ড. নাসির উদ্দিন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন জেসিআই ঢাকা মেট্রোর সভাপতি শরীফুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে ‘ঢাকা: এ সিটি অফ প্রবলেমস অ্যান্ড হোপস
(Dhaka: City of Problems & Hopes)’ নামক বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠিত হয়। বইটির সম্পাদনা করেছেন মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ। বইটিতে রাজধানী ঢাকা শহরের পরিবেশগত সমস্যাগুলি এবং সেই সঙ্গে সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে লেখা হয়েছে। ঢাকার জীববৈচিত্র্য, নগরায়ণের চাপ, বায়ুদূষণ, পানি সংকট, এবং নগর পরিবেশের নানা সমস্যা এ বইটিতে স্থান হয়েছে, পাশাপাশি শহরের উন্নয়ন এবং পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে।

অনুষ্ঠানের শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে এ্যাওয়ার্ড পাওয়া ৯ ব্যক্তি ও সংস্থা হলো- গ্রিন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর অব দ্য ইয়ার এওয়ার্ড পান উপকারী বৃক্ষ নিয়ে কন্টেন্ট নির্মাতা উম্মে কুলসুম পপি ও আবু সাঈদ আল সাগর, পরিবেশবাদী নেতৃত্বে ধরীত্রির জন্য আমরা-ধরা’র সদস্য সচিব শরীফ জামিল, তরুণ জলবায়ু নেতৃত্বে ইয়ুথ নেটের সোহানুর রহমান, সাংবাদিকতায় এখন টিভির বিশেষ প্রতিবেদক মাহমুদ রাকিব, গবেষণায় এনভায়রনমেন্ট এন্ড সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশান-এসডো, ক্লাইমেট ইম্প্যাক্ট প্রজেক্টে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন, লোকাল ক্লাইমেট রিজিলেন্স চ্যাম্পিয়ন ফেনী জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবার, সবুজ প্রতিষ্ঠানে এসিআই এগ্রো বিজনেস, পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনে শৈলবৃক্ষ ও পরিবেশবান্ধব কারখানায় বায়োফার্মা লিমিটেড।

পরিবেশ বিষয়ক এমন আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান রনি বলেন, ‘সম্মেলনে আমরা নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী সমাধান এবং পরিবেশবান্ধব উদ্যোগগুলোর উপর আলোচনা করছি, যা আমাদের পরিবেশ রক্ষায় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। আজকের এই প্ল্যাটফর্ম থেকে যে চিন্তাভাবনা এবং সমাধান উদ্ভাবিত হয়েছে, তা আমাদের দেশের পরিবেশগত পরিস্থিতির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পরিবেশ সংরক্ষণ শুধু একটি সরকারের বা সংস্থার দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই জন্যই মিশন গ্রিন বাংলাদেশ নতুন প্রজন্মের পরিবেশ সচেতন নাগরিক তৈরিতে কাজ করছে, যারা ভবিষ্যতের জন্য একটি সুন্দর এবং সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করবে।’

উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, মিশন গ্রিন বাংলাদেশ ও জেসিআই ঢাকা মেট্রোর যৌথ আয়োজনে এ অনুষ্ঠানের সহযোগিতা করছে ক্যাচ বাংলাদেশ ও সানফাই ফার্নিচার।  স্ট্রাটেজিং পার্টনার হিসাবে ছিল সেন্টার ফর অ্যাটমসফেরিক স্টাডিজ (ক্যাপস), অ্যাকশন ফর বেটার ক্লাইমেট, স্বপ্ন ৭১ প্রকাশন। সহ-আয়োজক হিসাবে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটি, হেল্প দ্যা ফিউচার, বিডিইনভায়রনমেন্ট ডটকম, ইয়ুথ প্লাটফর্ম ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট। নলেজ পার্টনার হিসেবে আছে দ্যা আর্থ, বাংলাদেশ ইয়ুথ সোসাইটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button