ছাত্রীরা অপরাধী নাকি ভিক্টিম? – চবি’র হাসিনা হলের ঘটনায় সঠিক বিচার প্রয়োজন

মুমতাহিনা চৌধুরী – করসপনডেন্ট, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শেখ হাসিনা হলের একটি ভয়াবহ ঘটনা সম্প্রতি শিক্ষার্থী, প্রশাসন এবং সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে কিছু ছেলেশিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেয়েদের হলের সামনের নৌকা ভাঙতে গিয়েছিল। যখন হলের নারী শিক্ষার্থীরা তাদের গভীর রাতে প্রবেশে আপত্তি জানায়, তখন এই ছাত্রদের কাছ থেকে তাদের ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ ট্যাগ দেয়া হয়। ঘটনা স্থলে উপস্থিত প্রশাসন, শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র বাকবিতণ্ডা এবং কিছুটা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১১ জন নারী শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ছিলেন গত বছরের জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে। তবে, এই বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের সমর্থকরা বলছেন, বহিষ্কৃতদের বিরুদ্ধে কোনো সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।আরও উল্লেখযোগ্য যে, বহিষ্কৃত ছাত্রীরা তাদের ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য দাবি তুলেছে এবং একপাক্ষিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এই ঘটনা ও সিদ্ধান্তের ফলে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে, ছাত্রীরা যেভাবে একপক্ষীয়ভাবে শাস্তি পেয়েছে, তাতে একে নারীবিদ্বেষী সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যদি বহিষ্কৃতদের নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত না করে একপাক্ষিকভাবে তাদের বহিষ্কার করে, তবে তা দেশের শিক্ষাঙ্গনে এক নতুন সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত, নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি এমন অসম্পূর্ণ বিচার এবং একপাক্ষিক শাস্তির প্রয়োগ ভবিষ্যতে আরও ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এদিকে, প্রক্টরিয়াল বডির একপাক্ষিক আচরণ এবং মন্তব্যগুলোর ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রক্টররা শিক্ষার্থীদের অসম্মান করেছে এবং খারাপ ভাষায় কথা বলেছে, যার মধ্যে প্রক্টরের “হানি ট্র্যাপ” বলার মতো বাজে মন্তব্যও অন্তর্ভুক্ত। এই ধরনের আচরণ ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক নয়, বরং বিভেদ সৃষ্টি করছে এবং ঘটনাটির সমাধানকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এই পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে, চবি’র শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে এবং দাবি জানিয়েছে, প্রশাসন যেন একটি ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়। তারা জানিয়েছেন, যদি প্রশাসন তাদের দাবি পূরণ না করে, তবে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে, যা সম্ভবত দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়বে।
এছাড়া, চবিসাসের সাংবাদিকরা যেভাবে ঘটনার প্রতিবেদন করেছে, তা অনেকের মতে নিরপেক্ষ ছিল না। একপাক্ষিক মন্তব্য ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। সাংবাদিকতার মৌলিক নীতি অনুসরণ করে সংবাদ পরিবেশন করা উচিত ছিল, যেন সত্যি প্রতিফলিত হয় এবং কোন পক্ষই অসত্যভাবে অভিযুক্ত না হয়।
এই পরিস্থিতি থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যাচ্ছে – প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝে একপাক্ষিক সিদ্ধান্ত নিতেই থাকে, তবে এর ফলাফল শিক্ষাঙ্গনে এক নতুন সংকট সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে যদি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া এবং সঠিক তদন্ত নিশ্চিত না করা হয়, তবে এটি শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। সঠিক তদন্ত এবং ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সমাধান হওয়া উচিত, যাতে শিক্ষাঙ্গন আবার শান্তিপূর্ণ এবং ন্যায্য পরিবেশে ফিরে আসে।