ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সেখানে এক পরিবার থেকে তিন জনের বেশি পরিচালক হতে পারবেনা এমন বিধান রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার( ২৮ মার্চ) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিং এ বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মাহমুদুল হোসাইন।
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক থাকার বিধান রয়েছে, সংশোধনীতে ১ জন কমিয়ে তিন জন করা হয়েছে খসড়া আইনে। ব্যাংক কর্মকর্তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত হলে তাদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের জরিমানা ও ক্ষতির দায় নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।’
মাহমুদুল হোসাইন আরো বলেন, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর মাধ্যমে এতোদিন ব্যাংকিং খাত পরিচালিত হয়ে আসছিল। এই আইনটি যুগোপোযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়। প্রস্তাবিত আইনটিতে মোট ৩৪ টি ধারা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে ইচ্ছাকৃত ঋণগ্রহীতাদের বিষয়ে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে আইনে।’
তিনি বলেন, ‘সামর্থ্য থাকার পরও যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ, অগ্রিম বা বিনিয়োগ বা আর্থিক সুবিধার অংশ বা তার ওপর আরোপিত সুদ পরিশোধ না করে তাহলে তা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিজের বা পরিবারের সদস্যের নামে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করলে, সেটিকে ঋণ খেলাপির আওতায় আনা হয়েছে।’
খসড়া আইনে আরো বলা হয়েছে, যে উদ্দেশ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ অগ্রিম নেওয়া হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করলে ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
সংবাদ ব্রিফিং এ বলা হয়, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের তালিকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সরবরাহ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। এছাড়া ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন( বিএসইসি) ও যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের কাছে কোম্পানি নিবন্ধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে।
আরও রয়েছে, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তালিকা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার ৫ বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্টানের পরিচালক ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি হিসেবে পরিগণিত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিচালক পদ শূন্য ঘোষণা করতে পারবে।
নোটিশ দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ঋণ খেলাপি গ্রহীতা তার কাছে পাওয়া টাকা পরিশোধ ব্যর্থ হলে অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা যাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি ঋণ খেলাপির তালিকা না পাঠায় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫০ লাখ এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে। তারপরেও যদি লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে তাহলে প্রতিদিনের জন্য এক লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে।
আইনে আরো রয়েছে, ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে লেনদেন, ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঋন দেওয়া ও জামানত গ্রহন বিষয়টি নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বা তার আত্মীয় যেই হোক না কেন তাকে অবশ্যই জামানত বা বন্ড বা সিকিউরিটি দিয়ে ঋণ নিতে হবে।