মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অষ্টমী স্নান উৎসব শুরু
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ)। এদিন সন্ধ্যা ৭ টা ০৫ মিনিটে লগ্ন শুরু হয়ে শেষ হবে বুধবার রাতে।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলাধীন লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদে দু’দিন ব্যাপি এই স্নান উৎসব সফল করতে ইতিমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পুর্ণ্যার্থীদের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, দেবতা পরশুরাম হিমালয়ের মানস সরোবরে স্নান করে পাপমুক্ত হন। হিমালয়ের মানস সরবরের পানি ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। প্রতি বছর চৈত্র মাসে পূণ্য লাভের আশায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হন নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দের ব্রহ্মপুত্র নদে। সেখানে স্নান করে নিজেদের পাপমোচন করেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেকে আসেন এই অষ্টমী স্নানে।
অষ্টমী স্নান উৎসবের শেষ মুহূর্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব লাঙলবন্দের অষ্টমী স্নান সফল করতে এবং এখানে আগ্ত ভক্তবৃন্দের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশ-বিদেশ থেকে আগত লক্ষাধিক পুণ্যার্থীদের জন্য থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুরো লাগল বন্ড এলাকা সিসি ক্যামেরা আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে এবারের অষ্টমী স্নান সম্পন্ন হবে বলে আমরা আশাবাদী।
রোজার মধ্যে হলেও এবারের আয়োজনে কোনো ঘাটতি থাকবে না বলে জানিয়েছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপন।
তিনি বলেন, একবারের অষ্টমী স্নান উৎসব দেশ- বিদেশ মিলিয়ে ১০ লাখের বেশি পুণ্যার্থীর আগমন ঘটবে বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় একটি সফল আয়োজন সম্পন্ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।
পুণ্যার্থীদের যাতায়াত ও পূজা নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া নদের নির্দিষ্ট জায়গায় বেশ কয়েকটি স্নান ঘাট তৈরি ও নদীর পরিবেশ ঠিক করতে কাজ করছে বিআইডব্লিউটিএ।
বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম কুদরাত এ খুদা জানান, সুষ্ঠুভাবে স্নান সম্পাদনের জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৮ টি স্নান ঘাট সংস্কার করা হয়েছে। নদের কচুরিপানা পরিস্কার করা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ৪৭টি নলকুপ, একশ’ অস্থায়ী টয়লেটসহ স্নান ঘাটে কাপড় পাল্টানোর ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
বন্দর থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পূর্ণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় পুলিশ ,আনসার ও র্যাবের সহস্রাধিক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
এছাড়া সাদা পোশাকে রয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য। তীর্থস্থানের তিন কিলোমিটার এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ও নদীতে নৌপুলিশ কাজ করছেন।
এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ,নেপাল, ভূটান ও শ্রীলংকা থেকে পূণ্যার্থীরা স্নানোৎসবে অংশ নিচ্ছেন বলে লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসব উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ জানান।
নারায়ণগঞ্জ এলজিআরডির নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ তাজুল ইসলাম তুহিন জানান, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দের উন্নয়নে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।