পাকিস্তানের সময়ও মানুষের ভোটের অধিকার ছিল: রফিউর রাব্বি
তানভীর মুহাম্মতদ ত্বকী হত্যার ১২১ মাস উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। শনিবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে ওই আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহ সভাপতি মুহাম্মদ সেলিম। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নিহত ত্বকীর পিতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. প্রদীপ ঘোষ বাবু, মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি লক্ষী চক্রবর্তী, সিপিবি শহর সভাপতি আবদুর হাই শরীফ, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা প্রমূখ।
নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি বলেন, দেশে বিচারহীনতা এখন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সরকার মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকারকে হরণ করে, ভোট দেয়ার অধিকারকে হরণ করে, মানুষের মৌলিক অধিকারসহ সাংবিধানিক অধিকারগুলোকে হরণ করে এক দুর্বৃত্তশক্তিকে প্রতিষ্ঠা করেছে। সরকারের অন্যায়, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও এসবের বিরুদ্ধে কথা ও কলমে মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ রাখার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে। আর তাই দশ বছর পেরিয়ে গেলেও ত্বকী হত্যার বিচার শুরু হয় না। সাগর-রুনি ও তনু হত্যার বিচার হয় না। এ দায় যতটানা বিচার ব্যবস্থার তারচেয়ে বেশি সরকারের। আজকে সরকার, সরকারের বিরোধিতাকে রাষ্ট্রের বিরোধিতা আক্ষা দিচ্ছে। ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম ও ভিন্নমতকে দমন করে, মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের কথা বলার অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য, বৈষম্য মুক্ত সমাজের জন্য। পাকিস্তানের সময়ও মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার ছিল, নয়তো ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেতো না। আজকে সে অধিকারও সরকার হরণ করেছে। সবকিছুকে দলীয়করণ করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অর্জন গুলোকে ধ্বংস করেছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রের সকল বাহিনীকে বিতর্কিত করে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। দেশের বাইরে এদের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। ত্বকী, সাগর-রুনি, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার দাবি জানাই।
এড. মাহাবুবুর রহমান মাসুম প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, মাননীয় মন্ত্রী, শামীম ওসমান কী আইনের উর্ধ্বে? কেন তাকে আইনের আওতায় আনছেন না? তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্রটি কেন আদালতে জমা দেয়া হচ্ছে না? আপনি তো বলেছেন অপরাধী যেই হোক তার বিচার হবে। তবে কেন ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না?
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।