প্রধান সংবাদ

কপ২৮ প্রেসিডেন্টকে অপসারণ ও জীবাশ্ম জ্বালানী লবিস্টদের বহিষ্কারের দাবি ইয়ুথনেটের

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ঢাকা, ২৪ মে ২০২৩ঃ পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আবু ধাবি জাতীয় তেল কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আল জাবেরকে জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের (কপ২৮) প্রেসিডেন্টের পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে দেশের তরুণ জলবায়ু কর্মীরা। পাশাপাশি কপ থেকে জীবাশ্ম জ্বালানী লবিস্টদের বহিষ্কার এবং জলবায়ু সুবিচারের জন্য নিবেদিত একজন নেতাকে কপ২৮ জলবায়ু সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগের জন্য দৃঢ় আহ্বান তাদের৷
তরুণ জলবায়ুকর্মীদের সংগঠন ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু আলোচনা ও নেগোশিয়েসনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং টেকসই সমাধানের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানী শিল্পের সংকীর্ণ স্বার্থের উপর পৃথিবী এবং বিপদাপন্ন প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে জীবাশ্ম জ্বালানী লবিস্টদের প্রভাব দূর করা এবং জলবায়ু সুবিচারের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন নেতা কপ২৮ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা টেকসই ভবিষ্যত গঠনের জন্য অপরিহার্য বিষয়। তেল কোম্পানির প্রধানকে কপ জলবায়ু সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচন করা আর ‘শিয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দেওয়া একই কথা। এতে জীবাশ্ম জ্বালানি ভিত্তিক করপোরেটদের হাতে গণমানুষের জলবায়ু সুবিচারের অধিকার ছিনতাই হয়েছে বলেও সংগঠনটি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ইয়ুথনেট আরও জোর দিয়ে বলছে, প্রধান দূষণকারী কর্পোরেটদের মাধ্যমে জাতিসংঘের জলবায়ু নীতি গ্রহণ, জাতিসংঘের অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করা কিংবা কপ প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত হতে দেয়া যাবেনা। এর ব্যতয় হলে ২০১৫ সালে গৃহীত প্যারিস জলবায়ু চুক্তির কেন্দ্রীয় লক্ষ্যগুলির সাথে বিরোধপূর্ণ হবে।
সংগঠনটি এমন সময় এ দাবিগুলো জানালো যখন, সুলতান আল-জাবেরকে অপসারণ করতে মার্কিন কংগ্রেস এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৩০ জনেরও বেশি সদস্য একাট্টা হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘ মহাসচিব ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রেসিডেন্টের কাছে উদ্বেগমূলক খোলা চিঠি দিয়েছে। জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন কপ২৮ নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নিতে রাষ্ট্রসমূহ জুন মাসে জার্মানির বন শহরে সম্মিলিত হতে যাচ্ছে।
কপ২৮ সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট সুলতান আল-জাবের, যিনি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আবুধাবি ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি (ADNOC) পরিচালনা করছেন। এই জীবাশ্ম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে এক বিলিয়ন ব্যারেল তেল সরবরাহ করে বিশ্বের ১১ তম বৃহত্তম তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী হিসাবে অবস্থান করছে। সেই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কপ প্রেসিডেন্ট হওয়া এটি সম্ভাব্য স্বার্থের দ্বন্দ্ব এবং জলবায়ু আলোচনার সততার উপর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ইয়ুথনেট।
ইয়ুথনেটের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেছেন, “জলবায়ু আলোচনার ন্যায়পরায়ণতা পুনরুদ্ধার করার সময় এসেছে। আমরা প্রধান দূষণকারীদের এজেন্ডা নির্ধারণ করতে এবং জলবায়ু অগ্রগতিতে বাধা দেওয়ার অনুমতি দিতে পারি না। কপ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো অবশ্যই আমাদের সর্বোত্তম স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। নির্বাচিত কিছু লোকের লাভের উদ্দেশ্য পূরণ না করে পৃথিবী এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের মঙ্গল নিশ্চিত করতে হবে । গ্রীনওয়াশিংয়ের বদলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং অর্থপূর্ণ প্রতিশ্রুতির সময় এসেছে।”
কপ সম্মেলন থেকে প্রধান দূষণকারীদের প্রভাব নির্মূল করার উপর গুরুত্বারোপ করে ইয়ুথনেট নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান আরো বলেন, ” জলবায়ু আলোচনায় স্বচ্ছতা এবং সুবিচার সর্বাগ্রে থাকতে হবে। আমাদের অবশ্যই এমন একটি আলোচনার জায়গা তৈরি করতে হবে যেখানে সমস্ত কণ্ঠস্বর, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাদের শোনা হয় এবং সম্মান করা হয়।”
সোহানুর রহমান ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে কপ২৬ সম্মেলনে পর্যবেক্ষক ছিলেন। গত বছরে মিশরের শার্ম এল শেখে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে সরকারের অফিসিয়াল যুব প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারের বিরুদ্ধে তিনি বহুবছর থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপর রয়েছেন।
সদ্য সমাপ্ত কপ২৭ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা থেকে সোহানুর রহমান বলেন, মিশরের কপ ছিল নীরব কপ যেখানে নাগরিক সমাজের কন্ঠস্বর তোলা ও প্রতিবাদ জানানোর কোন সুযোগ ছিল না। পৃথিবী বাঁচানোর সম্মেলন কপ এখন পরিণত হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের বাণিজ্য মেলায়। আর বৃহৎ তেল কোম্পানির প্রধানকে ২০২৩ সম্মেলনের সভাপতি নিয়োগ করে কপ সম্মেলনের কফিনে শেষ পেরেকটাও গেঁথে দিল পেট্রোলিয়াম নির্ভর রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই সম্মিলিতভাবে, জলবায়ু সংকটের পেছনে যারা প্রকৃত অপরাধী, সেই জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে মোকাবিলার সময় এসেছে।
ইয়ুথনেট জানায়, ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৬) অংশ নেওয়াদের মধ্যে ৫০৩ জন জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের লবিস্ট ছিলেন। মিশরে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে তেল এবং গ্যাস কোম্পানিগুলোর পক্ষেও প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি লবিস্ট তৎপরতা চালিয়েছেন। এই ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি লবিস্ট অংশগ্রহনকারীর সংখ্যা ২০২১ সালের সম্মেলন থেকে ২০২২ সালের সম্মেলনে কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এরা মুনাফার লোভে জেনেশুনে পৃথিবীর ক্ষতি করেছে ও দূষণকারী দেশের রাজনীতিকদের প্রভাবিত করছে, জলবায়ু সংক্রান্ত কাযক্রম ও পদক্ষেপের অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে।
২০২৩ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর তারিখে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ক্লাইমেট চেইঞ্জ কনফারেন্সে অনুষ্ঠিত হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে। প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তেল সমৃদ্ধ এই দেশটিতে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প স্তরের থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত করা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তির উচ্চাকাংখা পূরণের জন্য বিশ্বকে কীভাবে অগ্রসর করা যায় তা নিয়ে দরকষাকষি করতে ১৯০টিরও বেশি দেশের রাজনৈতিক নেতারা এ সম্মেলনে একত্রিত হবেন । এ সম্মেলনে প্রথমবারের মত প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অগ্রগতি মুল্যায়নে গ্লোবাল স্টকটেকিং অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। দীর্ঘ সময় পর মধ্যপ্রাচ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বার্ষিক জলবায়ু সম্মেলন। সর্বশেষ ২০১২ সালে কাতারে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এই সম্মেলন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button