১৬ ব্যাংকে নগদ অর্থের সংকট
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) ব্যবসায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ১৬টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ব্যাংকগুলোর ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে রয়েছে এবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি, ইসলামী ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক এবং উত্তরা ব্যাংক।
যখন একটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ে, তখন ওই প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের নগদ অর্থের সংকট দেখা দেয়। আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, যে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ ফ্লো যত বেশি ঋণাত্মক ওই প্রতিষ্ঠানে নগদ অর্থের সংকট তত বেশি। তবে ব্যাংক কোম্পানিতে স্বল্পসময়ে ক্যাশ ফ্লো কিছুটা ঋণাত্মক থাকলে তাতে সমস্যার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলে বুঝতে হবে ওই ব্যাংক সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক অবস্থায় থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ইসলামী ব্যাংক। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫২ টাকা ৬ পয়সা। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে মোট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো রয়েছে ঋণাত্মক ৮ হাজার ৩৮১ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। সে সময় শেয়ারপ্রতি অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৪ টাকা ২২ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ৩৩ শতাংশ। চলতি বছরের তিন মাসে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৩৫ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৫২ পয়সা। মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৪৩ পয়সা, যা বছরের মার্চে ছিল ৪১ টাকা ৩৯ পয়সা।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ৩০ টাকা ৯৪ পয়সা। এতে মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো হয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ কোটি ৩৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো ছিল ৪ টাকা ৮১ পয়সা। এ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো প্রায় আটগুণ বেড়েছে।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফায়ও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩৭ পয়সা, গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফাা হয় ৫৩ পয়সা। তবে সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২১ টাকা ৬৯ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ১৯ টাকা ৯৮ পয়সা।
শেয়ারপ্রতি ১৮ টাকা ৪২ পয়সা ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হওয়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে এবি ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশ ফ্লো মোট ঋণাত্মক হওয়ার পরিমাণ ১ হাজার ৪৮৫ কোটি ৮০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। এ ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৩ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৮৪ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ২৯ টাকা ৯৪ পয়সা।
বড় অঙ্কের ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর তালিকায় রয়েছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০ টাকা ৭১ পয়সা। অর্থাৎ, মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। সে সময় শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৬ টাকা ৭১ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও ব্যাংকটির সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। আর মুনাফা রয়েছে আগের বছরের সমান। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৮৪ পয়সা। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ২৮ টাকা ২১ পয়সা। আর বছরের প্রথম তিন মাসে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা করেছে ৭৪ পয়সা।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৯৬ পয়সা। এতে মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০ কোটি ৬৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভি ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৯ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৬১ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৯ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৩৯ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ৮ টাকা ৪৪ পয়সা।
চলতি বছরের তিন মাসে আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩ টাকা ৫ পয়সা। এতে মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ৫৪৪ কোটি ৭০ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভি ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৮৫ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফাা হয়েছে ৩৫ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯ টাকা ১৭ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ১৯ টাকা ১৪ পয়সা।
চলতি বছরের তিন মাসে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছ ঋণাত্মক ৮০ পয়সা। মোট ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ ৫১ কোটি ১৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২ টাকা ৩২ পয়সা।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ২৮ পয়সা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৩০ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৩৩ পয়সা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ৯৫ পয়সা।
ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২৭ পয়সা। এতে ব্যাংকটির মোট ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৭৩০ কোটি ৮৮ লাখ ৮ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৫ টাকা ৪৪ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাংকটি লোকসানে নিমজ্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সম্পদমূল্যে। চলতি বছরের তিন মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৯৭ পয়সা, গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১৮ পয়সা। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৯২ পয়সা। গত ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৬ টাকা ৪ পয়সা।
এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ঋণাত্মক ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ২৭ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১০০ কোটি ৭০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৮৭ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলেও এই ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ২ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮০ পয়সা। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৭৮ পয়সা, যা গত বছরের মার্চ শেষে ছিল ১৬ টাকা ৭৩ পয়সা।
প্রাইম ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ১ টাকা ৩৫ পয়সা। এতে ব্যাংকটির মোট ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৪ টাকা ৪৩ পয়সা।
এদিকে ব্যাংকটি গত বছরের মতো চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি ৯২ পয়সা মুনাফা করেছে। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৯ টাকা ৩৭ পয়সা। গত বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ২৭ টাকা ৩৬ পয়সা।
চলতি বছরের তিন মাসে পূবালী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫ টাকা ৫৮ পয়সা। মোট ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। গত বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ১ টাকা ১৯ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও চলতি বছর ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদমূল্য বেড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ৩৩ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৯ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৬ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪০ টাকা।
সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ৪৩ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩৫ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার টাকা। গত বছরও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৯ টাকা ৪ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফাও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৭ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২২ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৫৩ পয়সা। গত ডিসেম্বর শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য ছিল ১৩ টাকা ২৭ পয়সা।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৫ টাকা ৮৩ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৬০২ কোটি ৯১ লাখ ১৯ হাজার টাকা। গত বছর ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভি ছিল। চলতি বছর ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও মুনাফা ও সম্পদ বেড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১৫ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২০ টাকা ৩৪ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ টাকা ৮৯ পয়সা।
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২ টাকা ৮২ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে ২৯৯ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৪৪ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফাও কমে গেছে। তবে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৮ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১২ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৬ টাকা ৬৬ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৬ টাকা ৩৭ পয়সা।
ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১ টাকা ৫১ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ১১৭ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এক বছর আগে ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো পজিটিভ ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ২৫ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার পাশাপাশি ব্যাংকটির মুনাফাও কমে গেছে। তবে বেড়েছে সম্পদের পরিমাণ। চলতি বছরের তিন মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩২ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৬ পয়সা। আর চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ১৮ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৫ টাকা ২০ পয়সা।
উত্তরা ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৪ টাকা ৬৭ পয়সা। এতে মোট ক্যাশ ফ্লোর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩৪২ কোটি ৭১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এক বছর আগেও ব্যাংকটির ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শেয়ারপ্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ৮ টাকা ৩২ পয়সা।
ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও ব্যাংকটির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের তিন মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৮৫ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭১ পয়সা। চলতি বছরের মার্চ শেষে শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ৩২ টাকা ৬৫ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ টাকা ৫৪ পয়সা।
ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন হিসাববিদ বলেন, ক্যাশ ফ্লোর তিনটি অংশ থাকে। এর মধ্যে অপারেটিং অ্যাক্টিভিটিস অংশ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাশ ফ্লো অপারেটিং অ্যাক্টিভিটিস অংশ ঋণাত্মক হয়ে পড়লে বুঝতে হবে বড় ধরনের সমস্যা হয়েছে। আর অপারেটিং অ্যাক্টিভিটিস পজিটিভ থাকার পরও সব মিলে যদি ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকে, সেক্ষেত্রেও তারল্য সংকটের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক থাকলে হয়তো বড় সমস্যা হবে না। তবে যদি কোনো ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো দীর্ঘ সময় ধরে ঋণাত্মক থাকে তবে বুঝতে হবে ওই প্রতিষ্ঠান সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এ ধরনের ব্যাংক থেকে বড় গ্রাহকরা অর্থ তুলতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন।
ব্র্যাংক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লে অবশ্যই নগদ অর্থের সংকট সৃষ্টি হয়। ১৬টি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়ার অর্থ আমি বলবো এটা ব্যাংকখাতের সমস্যার থেকে ওই ব্যাংকগুলোর বড় সমস্যা। ব্যাংকগুলোর ম্যানেজমেন্ট ভালো হয়নি। ক্যাশ ফ্লো কখনোই ঋণাত্মক হতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, একটি ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়লে হয়তো আন্তঃব্যাংক থেকে ধার নিয়ে চালিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু আন্তঃব্যাংক যদি না দেয়, তখন কী হবে। ব্যাংক তো ডিফল্ট হয়ে যাবে। এ অবস্থা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। ব্যাংকে অবশ্যই পর্যাপ্ত তারল্য রাখতে হবে।
‘কয়েকটি কারণে ব্যাংকের ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হতে পারে। একটা হলো ম্যানেজমেন্ট ভালো নয়। তারা হয়তো তারল্য না রেখে ধার দিয়ে দিচ্ছে। এটা ব্যাড প্র্যাকটিস। আর একটা হতে পারে তারা বেশি লাভের আশায় ধার দিচ্ছে, কারণ তারল্য রাখলে তো লাভ নেই। তাই লাভের আশায় তারা ধার দিয়ে দিচ্ছে। এটাও ব্যাড প্র্যাকটিস।’
আহসান এইচ মনসুর বলেন, আবার যদি কোনো সময় নগদ অর্থ তোলার প্রবণতা বেড়ে যায়, তখন ক্যাশ ফ্লো ঋণাত্মক হয়ে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে গ্রাহক ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। যেমনটি হয়েছিল ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে। পরবর্তীসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থকে ধার দেওয়া হয়েছে। সরকার এভাবে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে ধামাচাপা দিতে চায়। আসলে এটা উচিত না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখানে মূল সমস্যা হচ্ছে ব্যাংকগুলো সঞ্চয়ের ওপর যে সুদ দেয়, তা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। কাজেই ব্যাংকে সঞ্চয় রাখলে তো মূলধন হারাবে। এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর আমানত কমে গেছে। যাই হোক পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। আমি মনে করি ব্যাংক ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা অদূর ভবিষ্যতে নেই।