গণতন্ত্র মঞ্চের রোডমার্চে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা
বগুড়ার মোকামতলায় রোডমার্চ শেষে ফেরার পথে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই সময় বহরের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছেন।
শিবগঞ্জ উপজেলার নাগরিক ঐক্য আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম শহিদ অভিযোগ করে বলেন, সোমবার বিকেল ৫টার দিকে বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকামতলার জয়পুরপাড়া রাস্তার মোড়ে সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে জনসভার আয়োজন করা হয়। শান্তিপূর্ণ জনসভা শেষে ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা রোডমার্চে অংশ নিতে ঢাকা থেকে আসা নেতাদের গাড়ি বহরে হামলা চালায়। এই সময় দুটি গাড়ির গ্লাস ভেঙে গেছে।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব সবুজ বলেন, গণতন্ত্র মঞ্চের গাড়িবহরে হামলার ঘটনা সঠিক নয়। বরং তারাই কথিত জনসমাবেশের নামে দেশবিরোধী সব কথা বলেছে। এটা শুনে স্থানীয় কিছু মানুষ তাদের দিকে তেড়ে গিয়েছিল।
সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় বগুড়া প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জোনায়েদ সাকি বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে ফেরার পথে হামলা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হামলায় ওসমান গনি, আইউব আলু, মনসুর রহমান, পাভেলসহ অন্তত ছয় জন আহত হন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ শেষ হয়েছে। তাদের বাধা দেওয়া বা হামলার ঘটনা জানা নেই। এখনও এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি।
এর আগে শিবগঞ্জের মোকামতলা জয়পুরপাড়া রাস্তার মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকা-দিনাজপুর রোডমার্চের অংশ হিসেবে এক জনসভার আয়োজন করে। সভায় শিবগঞ্জ উপজেলার নাগরিক ঐক্যর সদস্য সচিব আব্দুল বাছেদের সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্য সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এছাড়াও এই জনসমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ প্রমুখ।
নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের নামে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়েছে। তারা মানুষ খুন আর গুম করেছে। আমেরিকা আগেই দেশের সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করার কারণে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এখন সরকারের ওপরও সেই হুমকি এসেছে। আমাদের লড়াই গণতন্ত্রের জন্য। আওয়ামী লীগ সরকার কখনো স্বচ্ছ ভোট দিতে চায় না।
সবাইকে গণতন্ত্রের জন্য এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে এই সরকার অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছে। এর প্রতিবাদ আমাদের করতে হবে। এই সরকারকে ক্ষমতার ছেড়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। আমরা আবারও কর্মসূচি দেব। আমাদের দাবি না মানলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দেব। সরকার জেল, জুলুম, অত্যাচারের মাধ্যমে আর বেশি দিন ক্ষমতায় টিকতে থাকতে পারবে না।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার আমাদের এই দেশের নাগরিক ভাবে না। আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গুন্ডা বাহিনী বানিয়েছে। তাদের নিজস্ব গুন্ডা বাহিনী দিয়ে সবখানে আমাদের সমাবেশে বাধা দিচ্ছে। উনাদের জমিদারি আর বেশিদিন থাকবে না। দ্রুত সময়েই তাদের জমিদারি শেষ হয়ে যাবে। অচিরেই জনগণের আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটানো হবে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে এই সরকার। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন করে ৫০ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছেড়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে আরও বেশি বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
মোকমতলায় গণতন্ত্র মঞ্চের জনসমাবেশকে ঘিরে সোমবার দুপুর থেকেই অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল আলম মানিকের নেতৃত্বে সংগঠনটির শতাধিক নেতাকর্মীরা মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সন্ধ্যা ৭টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের জনসমাবেশ শেষ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে অবস্থা নেয়। এই সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের গাড়িবহর বগুড়া শহর দিকে যাওয়ার সময় হামলার ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার শহরের খোকন পার্কে সভার আয়োজন করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ নিয়েও শহরে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আকতার বলেন, শহীদ খান পার্কে জনসভা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা থাকলে বন্ধ করা হবে।