ঈদের আগে বেতন বোনাস, মজুরি বৃদ্ধি এবং লোডশেডিং এর প্রতিবাদে চট্রগ্রামে বিক্ষোভ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি: আজ ১৬ জুন ২০২৩, শুক্রবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে সারাদেশে একযোগে “অবিলম্বে ২৫ হাজার মজুরি নিশ্চত করো, ঈদের আগে বেতন বোনাস চাই এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজার, অসহনীয় লোডশেডিং, পরিসেবা বিলের বিরুদ্ধে জোট বাঁধো ” এই দাবি নিয়ে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রামে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কালুরঘাট শাখার আহ্বায়ক মোঃ সাইফুলের সভাপতিত্বে এ্যাড. মানিক শাহাদাত এর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা হাসান মারুফ রুমী, ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন নেতা মীর্জা আবুল বশর, কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মিজানুর রহিম চৌধুরী, রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শহিদ শিমুল, কেন্দ্রীয় সদস্য চট্টগ্রাম জেলা সম্পাদক মোঃ সোহাগ, রয়েল মার্মা, সংগঠক কালুরঘাট অঞ্চল , মোঃ সাত্তার, সংগঠক কালুরঘাট অঞ্চল, লোকমান হোসেন জনি সংগঠক ইপিজেড অঞ্চল।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানির দেশ বলা হলেও এর অভ্যন্তরে ভয়াবহ মজুরি নীপিড়ন ও বৈষম্য চলছে। এ-দেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি যেমন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক নীচে তেমনি এখানে টেকসই ব্যবস্থাপনা ও শ্রমবান্ধব পরিবেশও গড়ে তোলা হয়নি। ২০২৩ সালে এসেও ন্যূনতম মজুরি ৮০০০ টাকা মাত্র। অন্যদিকে মালিকদের মুনাফা, তাদের নিজস্ব উন্নয়ন থেমে থাকেনি। এই খাত ১০০ বিলিয়ন লক্ষমাত্রার দিকে এগিয়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাাজার ছাড়িয়ে নতুন নতুন বাজার তৈরি হয়েছে এশিয়া ও আফ্রিকায়। কিন্তু গার্মেন্ট খাতের এই বিশাল অবদানের ভাগিদার, স্বীকৃতি ও সুফল শ্রমিককে দেয়া হয়নি। শ্রমিকদের মজুরি কম দিয়ে, বেতন-ভাতা-বোনাসে ঘাপলা রেখে দিয়ে, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন করতে না দিয়ে, বহু বছরের পুরোনো শ্রমিক কিংবা সংগঠিত শ্রমিককে ছাঁটাই করা হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকে দ্রব্যমূল্যের দিশাহীনতার এই সময়ে দেশের অধিকাংশ গার্মেন্ট সংগঠনের পক্ষে ২৫০০০ টাকা মজুরির যৌক্তিকতা প্রাসঙ্গিক সকল কর্তৃপক্ষের নিকট তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে গঠিত মজুরি বোর্ডের কাছে দাবি প্রদান করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় এবং বিজিএমইএর নিকটও দাবিগুলো স্মারকলিপির মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি যথাক্রমে- চাল ১৫%, ডাল ১০০%, আটা ১০৩%, তেল (বোতল লুজ) ১২৬%, লবণ ৬৮%, ডিম ৬৭% এবং চিনি ১৮০% বৃদ্ধি পেয়েছে। টিসিবিতে বাজার দর যতই উল্লেখ থাকুক ৬০-৬৫ টাকার নীচে কী চাল কেনার সুযোগ রয়েছে! নেই। অন্যান্য দ্রব্যও বাজারে চড়া দামে জনগণকে কিনতে হয়। পুষ্টিহীন-বিরামহীন ‘সস্তা’ মজুরের পরিচয়ের সাথে শ্রমিকের কাঁধে যুক্ত হয়েছে লাগামছাড়া বাজার এবং গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট। গড়ে জ্বালানী তেলের দাম বেড়েছে ৪৭%। যার ফলশ্রুতিতে পরিবহন ভাড়া প্রায় ২২% সহ সকল পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ, গত ৫ বছরে মজুরি বৃদ্ধির বদলে দ্রব্যমূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধিতে ৮ হাজার মোট মজুরি এবং ৪১০০ টাকা বেসিক দিয়ে বর্তমান বাজারে তাদের বেঁচে থাকা দায়। এটা অমানবিক। এই গার্মেন্টখাত অর্থনীতিতে যে মূল্য ও বিশাল মুনাফা তৈরি করছে সেখানে উল্টোদিকে বায়ার ও দেশীয় মালিকরা ভয়াবহভাবে পোশাক শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে। আরো উল্লেখ্য, “২০২২ এ শেষের সরকারের খানাজরিপ বলতেছে ধনীদের আয় বেড়েছে ৬৪%। শ্রমজীবিদের আয় কমেছে। ফলে বাংলদেশে উচ্চ আয় বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে।” গত বছর গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি এক গবেষণায় দেখায় ৪ সদস্যর কেবল মাসিক খাবার খরচ হয় ২১ হাজার টাকার বেশী। এবং সার্বিক খরচ ৪৭,৭৮১ টাকা। আমাদের গবেষণায়ও দেখেছি একজন শ্রমিক পরিবারের সার্বিক খরচ হয় প্রায় ৪৪ হাজারেরও বেশী। নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রমিকদের মজুরি যথাযথভাবে নির্ধারণ করতে হবে; শ্রমপীড়ন ও মজুরিশোষণ আর চলতে দেয়া যায় না। আজকে আন্দোলন চলছে, এ আন্দোলন আরো বড় হয়ে দেশব্যাপী সর্বাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। কাজেই এই মজুরি বোর্ডকে অবিলম্বে নতুন মজুরির ঘোষণা দিতে হবে এবং আমরা আহ্বান করছি সেটি ২৫০০০ টাকা করতে হবে। মজুরি বাড়লে উৎপাদনশীলতা বাড়বে, দক্ষতা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে শ্রমিকদের মান বাড়বে, বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে।
বক্তৃতায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সামনে ঈদ। ঈদ উপলক্ষে যাতে কোথাও বোনাস নিয়ে টালবাহানা না হয়, বেতন যথাসময়ে দেয়া হয়। ঈদের বন্ধে রাতের আাধারে যেন কোনো কারখানা হঠাৎ বন্ধ না হতে পারে সেজন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরির্দশক ও সরকারের ভূমিকা থাকতে হবে। সারাদেশজুড়ে লোডশেডিং চলছে। শ্রমিক অঞ্চলে বেশিসময় ধরে কারেন্ট থাকেনা। এটাও বৈষম্য। বিদ্যুত সমস্যা দূর করতে হবে। পরিসেবার বিলের নাম দিয়ে জনগণের ওপর নতুন ধরনের অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের ওপর এই বিল চাপানো চলবে না।