প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে ১৩ ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে – সিপিডি

প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে ১৩ ধরনের চাপ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

চাপগুলো হচ্ছে- সামষ্টিক অর্থনীতির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত না হওয়া, রাজস্ব আদায়ের কঠিন লক্ষ্যপূরণ, ব্যাংকিংখাত থেকে অতি ঋণ করা, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, মুদ্রা বিনিময় হার, সরকারি ব্যয় কম হওয়া, রফতানি আয়ের কম প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কমে যাওয়া, খেলাপি ঋণ, কম রেমিট্যান্স প্রবাহ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

রোববার (১৮ জুন) ‘বাজেট সংলাপ-২০২৩’ এ এসব কথা তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের লেকশো’র হোটেলে সিপিডির এ বাজেট সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘সরকার যে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা গুলো উচ্চাভিলাষী। এই লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধিও যে লক্ষ্য ৭.৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখা সম্ভব হবে না। এছাড়া রফতানি প্রবৃদ্ধি, রাজস্ব আদায় এবং বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব লক্ষ্য বাস্তব সম্মত হয়নি।’

বাজেট ঘাটতি পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে অধিক ঋণ গ্রহণের লক্ষ্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ সংকট কাটানোর কোনো উদ্যোগের কথা বলা নেই বাজেটে। উন্নয়ন ক্ষেত্রে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের অবস্থা বেশি ভালো নয়। বাজেটে বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়নি বলেও জানান ফাহমিদা খাতুন।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বর্তমান সংকটময় সময়ে চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা না গেলে আগামীতে অর্থনীতিতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। বাস্তবতা বিবেচনা করেই সব কিছু চিন্তা করা উচিত। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক চাপ রয়েছে। সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া দরকার। সরকার ব্যাংক থেকে ধার করছে, এতে ব্যক্তি ঋণ কমে যাবে। বিনিয়োগ রক্ষণশীল রেখে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির চাপ সহ্য করা কঠিন হবে।’

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দেশের আর্থিক খাতে আস্থার সংকট রয়েছে। এটি ব্যাংকিং এবং শেয়ারবাজার উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে। সরকারে অভ্যন্তরীণ ঋণ গত ৫০ বছরের যেভাবে বাড়েনি গত এক বছরে তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। আগামী অর্থবছরে টাকা ছাপিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের ঋণ যোগান দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু সেটি ঠিক হবে না। তবে রিজার্ভ সংকট কাটাতে পাইপলাইনে জমে থাকা ঋণের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বাড়ানো যেতে পারে।’

অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুতের অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকা শহরে কিছুটা অবস্থা ভালো হলেও গ্রামের অবস্থা খুবই খারাপ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটের কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাজেটে এ সমস্যা সমাধানে খুব বেশি জোর দেওয়া হয়নি। বড় বাজেট দিয়ে বেপরোয়া কর আরোপ করা হচ্ছে। এতে সরকার খুশি হলেও আমরা আতংকিত।’

সংলাপে অতিথি ছিলেন- পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম, ফাইনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, শ্রমিক নেত্রী ও আলোকচিত্রী তাসলিমা আখতার, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সামি সাত্তারসহ অনেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button