নারায়ণগঞ্জে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ালো ডিমের দাম, নিশ্চুপ তদারকি সংস্থা
নারায়ণগঞ্জে ডিমের বাজারে রেকর্ড ছাড়াল ডিমের দাম। গত দুদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম ১৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা আগে ১৫০ টাকা ছিল।
ডিমের দামে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়ালেও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে তদারকি সংস্থা। ফলে আগে এক পিস ডিম ক্রেতাসাধারণ ১২ টাকা কিনতে পারলেও এখন ১৪-১৫ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে দামে বেশি বিক্রি হওয়ায় গরিবের হা-হুতাশ বাড়ছে।
এদিকে বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। এতে নিম্নবিত্ত ছাড়াও মধ্যবিত্তদেরও নাভিশ্বাস বেড়েছে। এ ছাড়া সামর্থ্য না থাকায় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এখন মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। তাই যারা ডিম দিয়ে দুবেলা ভাত জোগাড় করত, তাদেরও ব্যয় বেড়েছে। এতে গরিবের জন্য বাজার করা এখন বড় ধরনের মানসিক কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত দুদিনের ব্যবধানে প্রতি হালি (চার পিস) ফার্মের ডিমে ৭.১৪ শতংশ দাম বেড়েছে। আর গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রতি হালি ডিম ২৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বুধবার শহরের দিগুবাবুর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা, যা দুই দিন আগে ১৫০ টাকা ছিল। আর গত বছর একই সময় প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ফলে বছরের ব্যবধানে প্রতি ডজন ডিম ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।
দিগুবাবুর বাজারে ডিম কিনতে আসা আঃ জব্বার বলেন, বাজারে সব পণ্যের দাম বাড়তি। তাই ভ্যান চালিয়ে যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে ভালো কোনো খাবার জোগাড় করতে পারি না। ডিম দিয়ে বেশিরভাগ সময় পরিবারে ভাত জোগাড় করতে হয়। কিন্তু এই ডিমের দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। দেখার যেন কেউ নেই।
একই বাজারে ব্যবসায়ী সবুজ মিয়া বলেন, গত বছরের মতো পাইকারি বাজারে হঠাৎ করে ডিম ও মুরগির দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে কোনো ধরনের সংকট নেই। তারা ইচ্ছা করে বেশি মুনাফা করতে বছরের একটা সময় দাম বাড়িয়ে দেয়। এবারও এমনটাই হয়েছে। দেশে একাধিক তদারকি সংস্থা থাকলেও তারা কিছু করতে পারছে না। বরং আমরা বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করলে জরিমানা গুনতে হয়।
দিগুবাবুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী অপূর্ব আহম্মেদ জানান, বর্ষা মৌসুমে সবসময়ই ডিমের চাহিদা বেশি থাকে। সম্প্রতি বৃষ্টির কারণে বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। মাছের দামও চড়া। এ জন্য ভোক্তারা ডিমের প্রতি ঝুঁকছেন।
অন্যদিকে ডিমের দৈনিক যে চাহিদা রয়েছে, সে অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। কারণ খামারিরা ডিম উৎপাদনশীল বয়স্ক মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন। তা ছাড়া ডিমের চাহিদা ও উৎপাদনের কোনো সঠিক হিসাব নেই। এ কারণে একটু চাহিদা বাড়লেই বাজারে দ্রুত প্রভাব পড়ে যাচ্ছে। এবারও এমনটাই হয়েছে।
এদিকে বুধবার ডিমের মূল্য সহনীয় করার বিষয়ে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর ডিমের দামে নৈরাজ্য করায় তদারকি করে মূল্য সহনীয় করা হয়েছিল। অসাধুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছিল। ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় এবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তবে এটি দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরও আছে। ডিমের দাম কেন বাড়ছে, উৎপাদন খরচ বেড়েছে কিনা; সেটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ভালো বলতে পারবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যদি আমাদের এ বিষয়ে কাজ করতে বলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, ডিমের মূল্য সহনীয় করার বিষয়ে বাজার তদারকি করা হবে। ডিমের ক্রয়মূল্যের ভাউচার পরীক্ষা নীরিক্ষা করে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।