আমেরিকার মুরব্বিদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ: ওবায়দুল কাদের

বিএনপিকে আমেরিকার রোগে পাইছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বৈঠকের ব্যঙ্গ করেন তিনি। পিটার হাসের মুরব্বিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কথাবার্তা শেষ বলেও উল্লেখ করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেছেন, ‘তলে তলে যখন সব শেষ তখন আর এসব (বিএনপি-পিটার হাস বৈঠক) করে লাভ কী? পিটার হাসকে দেখিয়ে নির্বাচন বন্ধ করবেন, ঢাকায় তাণ্ডব করবেন, সেই খেলা খেলতে দেব না। সেই খেলা সন্ত্রাসের খেলা, সেটা খেলতে দেব না।’

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকের খবর বের হয়।

ওই বৈঠকের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বিএনপিকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আর কাউকে তো পায় না। ওইভাবে আমেরিকানরাও আসে না। পাত্তা দেয় না। দৌড়ে যায় পিটার হাসের (বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত) কাছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পিটার হাস, দুপুরে লাঞ্চ করতে যায় পিটার হাস, রাতে ডিনার করতে যায় পিটার হাস।’

তিনি বলেন, আমি জানি না হাসে ফখরুলকে কী স্বপ্ন দেখিয়েছে। তবে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। ফখরুল সাহেব দিল্লি বহুদূর। ক্ষমতার পথ আপনারাই বন্ধ করে দিয়েছেন। পিটার হাস সাহেব কী করবেন? ভিসানীতি দেবেন? কি করবেন নিষেধাজ্ঞা দেবেন? পিটার হাস সাহেবের মুরব্বিদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গেছে। আমেরিকার মুরব্বি যারা তাদের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ। উচ্চপর্যায়েও কথাবার্তা হয়ে গেছে।’

উল্লেখ্য, এর আগে গত ৩ অক্টোবর দলীয় এক কর্মসূচিতে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘কোথায় নিষেধাজ্ঞা? কোথায় ভিসানীতি? তলে তলে আপস হয়ে গেছে। দিল্লিকে আমেরিকার প্রয়োজন। আমরা আছি দিল্লি আছে, দিল্লি আছে আমরাও আছি। শেখ হাসিনা সব ভারসাম্য করে ফেলেছেন। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আর কোনো চিন্তা নাই। নির্বাচন হবে, খেলা হবে।’

বিএনপির দেওয়া বদনাম গোছানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজিরবিহীন সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন বলে দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা বেঁচে থাকলে এই দেশে নির্বাচন কেউ বন্ধ করতে পারবে না। নির্বাচন হবে, শান্তিপূর্ণ হবে। এ দেশে নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন শেখ হাসিনা ৷ এ দেশে নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচন তিনিই করবেন। নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচন হবেই।

তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব নির্বাচনে না আসলে আমও যাবে, ছালাও যাবে ৷ দুইটাই হারাবেন। দুনিয়াব্যাপী আপনারা বদনাম করেছেন, দেশে দেশে বদনাম করছেন, বদনাম গোছানোর জন্য শেখ হাসিনা এমন নির্বাচন করবেন, যে নির্বাচন হবে নজিরবিহীন। ফখরুল সাহেব হারালে আর পাবেন না।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের সর্বশেষ বক্তৃতা শুনে মনে হলো- তিনি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মরা লাশ নিয়ে টানাটানি করছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মরা লাশ। আজিমপুরের গোরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত। গোরস্থান থেকে ফখরুল এখন ওই মরা লাশ টেনে আনছেন। এই মরা লাশে মুক্তি আসবে না।

গত ৯ অক্টোবর এক কর্মসূচিতে বিএনপি নেতাদের মাথায় ইউরেনিয়াম ঢেলে ঠান্ডা করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। তার সেই বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি নেতারা। বৃহস্পতিবারের শান্তি সমাবেশে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যারা বন্ধ করে দিতে চায়, আমরা এত কোটি কোটি টাকার ইউরেনিয়াম কেন আনলাম, এজন্য বলেছি ওদের মাথার ওপর ঢালব। ফখরুল, মির্জা আব্বাসরা গরম হয়ে যায় তাদের মাথার ওপর ঢালতে হবে।’

আগামী জানুয়ারি মাসে সারা দেশে ফাইনাল খেলা হবে বলে উল্লেখ করে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘খেলা হবে সারা ঢাকায়, খেলা হবে চট্টগ্রামে, খেলা হবে সিলেটে, খেলা হবে রাজশাহীতে, খেলা হবে বরিশালে, খেলা হবে খুলনায়, খেলা হবে সারা বাংলায়। ঠিক আছে, ফাইনাল পর্যন্ত খেলতে হবে। এখনই ক্লান্ত হলে চলবে না।’

তিনি আরও বলেন, খেলা হবে, খেলার জন্য প্রস্তুত হয়ে যান। খেলা হবে, সামনে আসছে সেমিফাইনাল। তারপরে ফাইনাল, গলা ঠিক রাখতে হবে। সামনে আরও দুই মাস, এখনই তোমরা বেশি ক্লান্ত হইও না। সবদিক থেকেই খেলা হবে। ওরা ফাউল করবে, ফাউলের জবাব দিতে হবে। লাল কার্ড দেখাতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button