শিশুরা কেন পরিবারে নির্যাতিত? – মোহাম্মাদ ইয়াসিন আরাফাত উন্নয়ন কর্মী 

দেশে শিশুর সংখ্যা ৬ কোটি যা মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ । বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ শিশু যাদের বয়স ১৫ এর নিচে। শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ কথাটি সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হল প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি শিশু পরিবারে বাবা মা-বা অন্য কোন নিকট আত্মীয়ের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৯ জন শিশু বাবা-মা ও শিক্ষক দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। বিষয়টি অনেক শঙ্কার ও অগ্রহণযোগ্য।

 

শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের প্রথম স্কুল হচ্ছে পরিবার। শিশুদের মন কাদামাটির মত তাই তারা পরিবারে যা দেখে তাই শেখে। শিশুর মনন ও উপযুক্ত বিকাশ ও পরিবারে হয়। শিশুবান্ধব পরিবার এর গুরুত্ব তাই অনেক। প্রশ্ন হল পরিবার যদি শিশুদের জন্য নিরাপদ না হয় তবে তারা যাবে কোথায়? 

অনেক পরিবারে দেখা যায় বাবা মা শিশুদের সামনে ঝগড়া করছেন। অনেকে আবার সেই রাগ ঝাড়ছেন সন্তানের উপর যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। বাবা-মার কলহ বিবাদ শিশুরা ভালভাবে নেয় না। বরং এতে শিশুদের মানসিক বিপর্যয় ঘটে যা তাদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করে। 

আমাদের পারিবারিক কথা – বার্তা, আচার-আচরন, সম্বোধন কোন কিছুই শিশু বান্ধব নয়। আমাদের মাঝে কিছু প্রচলিত ধারনা আছে যেমন, ছোটরা বেশি বুঝতে হয় না, ছোট মুখে বড় কথা ভাল নয়, বেশি বুঝতে চেয় না, বড়দের কথার মাঝে ছোটদের কথা বলতে নেই ইত্যাদি। কিন্তু যে বিষয়ের সাথে শিশুর স্বার্থ জড়িত তাতে শিশুর মতমত নেয়ার বিধান আছে। 

বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম শিশু আইন প্রবর্তন করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে শিশু সুরক্ষাকে প্রাধান্য একটি পরিপূর্ণ শিশু আইন করা হয়, যা ২০২৩ সালে নতুন করে সংশোধন করা হয়। যেখানে শিশুর সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়টি অনেক গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়েছে। ২০১১ সালের শিশু নীতিমালা রয়েছে। শিশুদের বিষয়টিকে অতীব গুরুত্ব ও সল্প সময়ের মধ্যে বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নারি ও শিশু ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। রয়েছে কয়েকটি হট লাইন নাম্বার যেখান থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিকার নেয়া যায়।  

প্রশ্ন হল আইনের রক্ষা কবচ থাকার পরেও কেন প্রায় ১ কোটি শিশু পরিবারে বাবা-মা বা অন্য কোন নিকট আত্মীয়ের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে?  মোদ্দাকথা হচ্ছে, আইন সম্পর্ক আমাদের যথেষ্ট অজ্ঞতা আছে। আইন পালনেও রয়েছে অনীহা যার বিরুপ প্রভাব পরছে অবুজ শিশুদের উপর। অভিভাবকরা শিশুদের পালনের দায়িত্ব নেয়ার সাথে সাথে শাসনের অধিকার আছে বলে মনে করছেন। কিন্তু মানসিক নির্যাতন এর বিষয়ে তাদের পরিষ্কার ধারনা নেই। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দরকার। সরকারের পাশাপাশি সচেতন নাগরিকদের শিশু সুরক্ষার বিষয়টি প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আসতে হবে। সিটি কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন ওয়ার্ড ভিত্তিক নাগরিকদের দ্বারা শিশু সুরক্ষা কমিটি করে অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। সরকারি বেসরকারি সকলের সমন্বিত  প্রচেষ্টায় আমরা একটি সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারি, যেখানে শিশুরা কল্যাণ ও নিরাপত্তার সাথে বিকশিত হতে পারবে। আজকের শিশুদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারলেই আমরা সুন্দর একটি বাংলাদেশ এর কথা ভাবতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button