এক সপ্তাহে বি এন পি’র তিন নেতার মৃত্যু কারাগারে
৩ ডিসেম্বর ২০২৩, রোববার
শেখ মঈনুল আজাদ
রিপোর্টার, চান্দগাঁও
গত এক সপ্তাহে কারা হেফাজতে বিএনপি’র তিন নেতার মৃত্যু হয়েছে। তিন জনই গত ২৮শে অক্টোবরের পর গ্রেপ্তার হয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। তারা হলেন- চট্টগ্রাম মহানগরের মোহরা ওয়ার্ড বিএনপি’র সহ-সভাপতি গোলাপুর রহমান (৬৩), গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান হীরা খান (৪৫) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি’র সদস্য ইমতিয়াজ হাসান বুলবুল।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫শে নভেম্বর শনিবার দুপুরে কাশিমপুর কারাগারের ভেতর অসুস্থ হয়ে পড়েন গোলাপুর রহমান। তাকে কারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে তাকে কারা এম্বুলেন্সে দ্রুত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নেয়ার পর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা ছিল। শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে এক কর্মকর্তা গোলাপুর রহমানের ছেলেকে টেলিফোনে তার মৃত্যুর খবর দেন। লাশ আনার জন্য ঢাকায় যেতে বলেন। ওই কর্মকর্তা জানান, বেলা দুইটার দিকে তিনি অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মোহাম্মদ লুৎফর রহমান আইনি প্রক্রিয়া শেষে গোলাপুরের লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কথা জানান।
চট্টগ্রাম বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, চান্দগাঁও থানা বিএনপি’র সভাপতি ও মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ আজম, গোলাপুর রহমানসহ সাতজনকে ২৮শে অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশের আগের দিন সন্ধ্যায় পল্টনের বিএনপি অফিসের সামনে থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এর পর থেকে তারা কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন।
এদিকে বিএনপি নেতা জহিরুল হক ভূঁইয়া বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকাল সোয়া ছয়টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় করা একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম বলেন, ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি’র মহাসমাবেশে যোগ দিয়ে বিকালে ট্রেনযোগে শ্রীপুর রেলস্টেশনে এসে নামেন আসাদুজ্জামান। এ সময় শ্রীপুর থানার পুলিশ তাকে আটক করে। পরে তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ওদিকে ২৬শে নভেম্বর কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হন বিএনপি’র নেতা ইমতিয়াজ হাসান বুলবুল। ওই দিনই তাকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করে কারা কর্তৃপক্ষ। ৩০শে নভেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তবে বুলবুলের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ২৪শে নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তারের পর নির্যাতন করে ওয়ারী থানা পুলিশ।
বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেন, গত ২২শে অক্টোবর প্রথমে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বুলবুলের পকেটে জোর করে গাঁজা ঢুকিয়ে দিয়ে ওয়ারী থানার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এলে তাদের হাতে তাকে তুলে দেয়। সেদিন পুলিশ তাকে ছেড়ে দিলেও ২৪শে অক্টোবর ওয়ারী কাজী আরিফ স্কুলের সামনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মীরা বুলবুলকে মারধর করে আবারো পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর তাকে থানায় অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এসময় পরিবারের সদস্যরা তাকে দেখতে গেলে তাদের দেখতে দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে বুলবুলের খোঁজে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে একাধিকবার গেলেও তার হদিস পাননি। গত ২০শে নভেম্বর পরিবার নিশ্চিত হয় বুলবুল কাশিমপুর কারাগারে আছেন। এরপর সেখানে গিয়েও বুলবুলের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি তার পরিবারের সদস্যরা। ২৪শে নভেম্বর বুকের ব্যথায় পড়ে গেলে বুলবুলকে নেয়া হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। পুরো বিষয় পরিবারের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরিবারকে জানানো হয়।