প্লাস্টিক হাটাও পরিবেশ বাঁচাও স্লোগানে স্প্রিং টাইম ক্যাম্প

প্লাস্টিক ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশকে সুস্থ সুন্দর রাখতে স্প্রিং টাইম ক্যাম্প পালন করেছেন “নো প্লাস্টিক ডে ” যেখানে স্প্রিং টাইম ক্যাম্পের সদস্যরা একসঙ্গে হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকা সকল সাধারণ মানুষকে সচেতন করেন তাঁর পাশাপাশি তাঁরা উদ্যানে পড়ে থাকা প্লাস্টিক সংগ্রহ করে রিসাইক্লিং করতে নিয়ে যায়।

“নো প্লাস্টিক ডে” তে উপস্থিত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা গাজী আশিকুল ইসলাম জানায় প্লাস্টিক দূষণ মানুষের স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সাধারনত প্লাস্টিক পদার্থে প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক রঞ্জক মেশানো হয়।

এসকল রঞ্জক কারসিনজেন হিসেবে কাজ করে ও এন্ডোক্রিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ২০২২ সালের মার্চে প্রকাশিত এক গবেষণা ফলাফলে প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ শনাক্ত হয়।বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পতিত হচ্ছে। ফলে সমুদ্রের জলজ প্রাণীগুলো খুব সহজেই হারিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের পরিচিত প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। ঘরের পাশে খাল, বিল, পুকুর ও নদী প্লাস্টিক বর্জ্যে মৃতপ্রায়। কয়েক বছর আগে বুড়িগঙ্গা খুঁড়তে গিয়ে দেখা গিয়েছিল প্লাস্টিকের সর্বনাশা রূপ। এ কথা নিশ্চয় কেউ ভুলে যাননি।

এক দিকে অপচনশীল প্লাস্টিক জমা হয়ে ভ‚মির রূপ বদলে যাওয়া; অপর দিকে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাবে সমগ্র ভূপরিবেশ বিপন্ন। সচরাচর প্লাস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যাদি থ্যালেক্স, ভারী খনিজ, বিস্তানল-এ, ননিফেনল, ডাইকোরো-ডাইফেনাইল-ডাইকোরো ইথেন, ফেনানথ্রিন, পলিকোরিন-ডাই-ফিনাইল-ইথার সব কিছুরই পরিবেশ মানুষ এবং পশুপাখির ওপর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ইলেকট্র্রনিক বর্জ্যরে প্লাস্টিক এখন গোটা দুনিয়ার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণত চিকিৎসাসামগ্রী, পানি এবং পানীয় বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী সংরক্ষণ ও পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক। রেফ্রিজারেটর, খেলনা ও পিভিসির পাইপ তৈরিতে প্লাস্টিক হচ্ছে মূল উপাদান। প্লাস্টিকের বোতলে অথবা অন্য কোনো পাত্রে বেশিদিন খাবার সংরক্ষিত রাখলে তা রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধিত করে।

মাইক্রো প্লাস্টিক যেটা পাঁচ মিলিমিটারের কম ঘনত্বসম্পন্ন তা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। কারণ এটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে আণুবীক্ষণিক বিষাক্ত পদার্থে পরিণত হয় এবং অতি সহজে মাটি ভেদ করে ভ‚পৃষ্ঠের নিচের পানির আধার বিষাক্ত করে তোলে; মৃত্যু ও ক্যান্সারের ঝুঁঁকি বাড়ায়। এ ছাড়াও প্লাস্টিকের বর্জ্য পোড়ানোর ফলে অদৃশ্য মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা ভয়ঙ্করভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়, যা নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাসের সাথে আমাদের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ ছাড়াও প্লাস্টিকের মধ্যে মাইক্রোবিডস থাকে, যা পরিবেশ দূষণের সহায়ক। এসব মাইক্রোবিডস জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পরিবেশদূষণ, পানিদূষণ, বায়ুদূষণ এবং ভ‚মিদূষণের প্রধান নিয়ামক প্লাস্টিক। আবার প্লাস্টিক পোড়ানোর সময় মিথেন গ্যাসযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া বের হয়। গাছপালা, ফসলসহ সব প্রাণীর জন্যই প্লাস্টিক ক্ষতিকর। ক্যান্সার, চর্মরোগ ও শ্বাসনালীর অসুখের মতো অসুস্থতার কারণও এটি। এমনকি প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে শহরের ড্রেন ও নর্দমাগুলো বন্ধ থাকায় সারা বছরই পানি জমে মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় দুর্গন্ধযুক্ত বাতাসের। মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হওয়ার কারণে ম্যালেরিয়া এবং মশাবাহিত অন্যান্য অসুখের প্রাদুর্ভাব; কিন্তু আমরা সামলাতে পারছি না। অনেকসময় দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের পশুপাখি অথবা মাছ ছোট ছোট প্লাস্টিকের টুকরা গিলে ফেলে। এগুলো তাদের পেটের ভেতরে জটপাকিয়ে তাদের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটায়। তাই তিনি বলেন সবাইকে প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে ও প্লাস্টিক ব্যবহার যতটুকু হয় তা রিসাইক্লিং করার আহ্বান জানান সবাইকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button