কক্সবাজারে ধসে পড়ছে পাহাড়, বর্ষার শুরুতেই ১৩ জনের মৃত্যু
কক্সবাজারে ভারী বৃষ্টিপাত মানেই পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বর্ষার শুরুতেই পৃথক পাহাড় ধসে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১১ জন এবং শহরে ২ জনসহ মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি টানা ৫ দিনের বৃষ্টিতে শহরের অন্তত ২০ পয়েন্টে পাহাড় ধস হয়েছে। এতে বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থানরতদের। এদিকে প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কক্সবাজারে পাহাড়খেকোরা পাহাড় কাটার উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নিয়েছে বর্ষা মৌসুমকে। বৃষ্টির পানির সঙ্গে নামিয়ে দিচ্ছে পাহাড়ের মাটি। শহরের পাহাড়তলী, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাঁজামঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী এবং বাস টার্মিনালসহ ১০ টির বেশি পয়েন্টে চলছে গণহারে পাহাড় কাটা। পাহাড় কেটে সমতল করে বের করা হচ্ছে বসতভিটার জায়গা। নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়িসহ বহুতল ভবন। এতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি বসতবাড়ি। যার ফলে প্রতিবছর পাহাড় ধসে হতাহতের ঘটনা যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ আজ বুধবার (৩ জুলাই) ভোরে উখিয়া উপজেলার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ-১ ব্লকে পাহাড় ধসে মাটি চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে, গত ১৯ জুন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৫টি স্থানে পাহাড় ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে ২ জন স্থানীয় বাসিন্দা ও অপর ৮ জন রোহিঙ্গা। এর ঠিক ১ দিন পরেই ২১ জুন শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মাটি চাপায় ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী’র মৃত্যু হয়েছে। সবমিলে এবারে বর্ষার শুরুতে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে
পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করা লোকজনের বেশিরভাগই দরিদ্র হলেও এসব জায়গার মূল মালিক প্রভাবশালী। তারা পাহাড়ের জায়গা দখল করার জন্য হতদরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিচ্ছে বা পাহারাদার হিসেবে রাখছে। এতে শুধু পাহাড়ই ধ্বংস হচ্ছে না, পাশাপাশি ভরাট হচ্ছে বৃষ্টির পানি অপসারণের একমাত্র মাধ্যম নালা-নর্দমা। যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে লাগোয়া শহর হওয়ার পরেও বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের আশংকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরাতে মাইকিং করা হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার পরও বাসিন্দারা কেন পাহাড় ছাড়ছেন না, এমন প্রশ্নে পাহাড়ে থাকা লোকজন জানান, নিরাপদ আবাসস্থলের নিশ্চয়তার অভাবে তারা পাহাড়ে অবস্থান করছেন।
যদিও এ নিয়ে দ্বিমত জানিয়েছেন সচেতন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, যারা পাহাড় ছাড়ছে না তারা মূলত অবৈধভাবে পাহাড় দখলে মরিয়া । তারা জীবনের মায়া ত্যাগ করে প্রভাবশালীদের ইন্ধনে পাহাড় দখলে নেমেছে। তাদের পেছনে সহযোগি হিসেবে রয়েছে প্রভাবশালী মহল।
শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরাতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি সচেতন করা হচ্ছে। বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড় দখলবাজদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এই প্রচারণা অব্যাহত থাকবে।
সচেতনরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বাকি সময় নীরব থাকে। পাহাড়খেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অবৈধভাবে পাহাড়ে দখল করে অবস্থানকারীদের পানি-বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া দরকার। এতে অবশিষ্ট পাহাড় যেমন রক্ষা পাবে তেমননি মৃত্যুর ঝুঁকিও করবে। রক্ষা পাবে পরিবেশ প্রকৃতি।
এদিকে, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ এ এম মো. আব্দুল হান্নান জানান, এই বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন থাকবে। গতকাল (মঙ্গলবার) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।