মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া ঝর্ণায় নিখোঁজ সিফাতের রহস্যজনক মৃত্যু : পরিবার শোকে ক্ষুদ্ধ

চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান, দৈনিক ন্যায়ের আলো

চট্টগ্রাম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং — চট্টগ্রামের মিরসরাই খৈয়াছড়া ঝর্ণার ভ্রমণে গিয়ে সিফাত (২০) নামে এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যুতে পরিবারের সন্দেহ ও প্রশ্ন বেড়েই চলেছে। ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বন্ধুবান্ধবদের সাথে জীবনে প্রথমবারের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয় ট্রিপে যায় সিফাত। মিরসরাইয়ের এই ঝর্ণাটি একাধিক মৃত্যুর ঘটনার জন্য কুখ্যাত, তবুও সেদিন গাইড ছাড়াই সেখানে যান সিফাত এবং তাঁর ১২ জন বন্ধু—১০ জন ছেলে এবং ৩ জন মেয়ে।

তাদের অবস্থানের হোটেল “মায়ের দোয়া” থেকে সকালের নাস্তার পর দুপুরের খাবার অর্ডার দিয়ে তারা ঝর্ণার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ১২টা ৩০ মিনিটে গ্রুপটি ১২তম ঝর্ণায় পৌঁছায়, যা ছিলো অত্যন্ত নির্জন। ঝর্ণার চারপাশে উঁচু পাহাড়ের দেয়াল ঘেরা একটি ছোট পুকুরের মতো স্থানে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়ে, তারা পানিতে নেমে আনন্দ করছিল। কিন্তু সিফাত পানিতে নামেনি। বরং সে উপরে বসে সময় কাটাচ্ছিলো, তার বন্ধুরাও নিশ্চিত করেছে যে সিফাত পানিতে নামতে অনাগ্রহী ছিলো।

দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে, সিফাতের বন্ধুরা জানায়, হঠাৎ করে সিফাত তাদের চোখের সামনে থেকে “উধাও” হয়ে গেছে। তারা দাবি করে, তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছিলো, কিন্তু গ্রামবাসীর তথ্য মতে, সেই সময়ে তাদের বেশিরভাগ সদস্য হোটেলে ফিরে এসে দ্রুত ঢাকায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করে।

পরিবার এবং গ্রামবাসীর মতে, সিফাতের বন্ধুরা সত্য গোপন করছে। গ্রামবাসী সিফাতের কিছু বন্ধুদের আটকে রাখলেও, পাঁচজন ঢাকায় চলে আসে। তাদের একজনের কথায়, রাতে পুলিশকে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করা হয়েছিলো, কিন্তু স্থানীয় থানার পুলিশ তা অস্বীকার করে।

সিফাতের পরিবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র এবং স্থানীয়রা মিলে মিরসরাইয়ে এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। অবশেষে, তিন দিনের অনুসন্ধানের পর ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে ১২তম ঝর্ণার পুকুর থেকে সিফাতের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। পরিবারের দাবি, সিফাত পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই, কারণ পানি হাঁটুসমান গভীর ছিলো এবং অতীতে এমন পানিতে কেউ ডুবে মারা যায়নি।

পরিবারের পক্ষ থেকে সিফাতের বন্ধুদের সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি, তবে পরিবারের দাবি, ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া যথাযথভাবে হয়নি।

সিফাতের অকাল মৃত্যু এবং বন্ধুদের পক্ষ থেকে রহস্যময় আচরণ তার পরিবারের মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। “আমার ভাইকে আমরা ফেরত পাবো না, কিন্তু আমি চাই পৃথিবীতে আর কারো ভাইয়ের সাথে যেন এমন না হয়,” বলেন সিফাতের বড় বোন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button