‘লাদেনের সহযেগী ফখরুল হাল ধরেছিল জঙ্গি সংগঠন হুজির’- সিটিটিসি
সিটিটিসি’র ধারণা ছিল, জঙ্গি সংগঠন হুজিবি’র কোনো কার্যক্রম নেই, তাই হয়তো তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু ধারণা ব্যর্থ করে দিয়ে তারা নতুন করে সংগঠিত হয়েছে। আল-কায়েদার সাবেক প্রধান ওসামা বিন লাদেন, মোল্লা ওমরের সঙ্গে আফগানিস্তানে কাজ করা এক জঙ্গি বাংলাদেশে ফিরে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তাদের সব পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে সিটিটিসি। কারণ কিছু করার আগেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮), মো. সাইফুল ইসলাম (২৪), মো। সুরুজ্জামান (৪৫), হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৩), মো. দীন ইসলাম (২৫) এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪৬) ।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রধান জঙ্গি নেতা হলেন- মো. ফখরুল ইসলাম (৫৮)। ১৯৮৮ সালে আফগান যুদ্ধে যোগ দিতে তিনি পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেখানে ট্রেনিংয়ে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখেন। সেসময়ে ফখরুল আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও মোল্লা ওমরের সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎও করেছেন।
মুফতি জাকির হোসেন করাচি শহরে ইসলামিয়া মাদরাসার প্রিন্সিপাল এবং আল কায়েদার সামরিক কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি ফখরুল ইসলামকে আল কায়েদা সংগঠনের জিহাদি ট্রেনিংয়ের জিহাদের দাওয়াত দিলে সে দাওয়াত গ্রহণ করে। ফখরুল ইসলাম জিহাদী ট্রেনিংয়ে অংশ নিতে মুফতি জাকিরের সঙ্গে একাধিকবার পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানের কান্দাহার শহরে প্রশিক্ষণে যায়।
ফখরুল ওই ট্রেনিংয়ে বিভিন্ন অস্ত্র প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র- একে-৪৭, এলএমজি ও রকেট লাঞ্চার পরিচালনা শেখে। ট্রেনিংয়ের সময় কান্দাহারের সমশেদ পাহাড়ে তিনি নিয়মিত ফায়ারিং অনুশীলন করতেন। অনুশীলনের সময় ফখরুল ইসলাম একে-৪৭সহ সশস্ত্র অবস্থায় প্রশিক্ষণ এলাকায় ৪ ঘণ্টা করে নিরাপত্তামূলক ডিউটি করতেন।
করাচি থেকে ১৯৯৫ সালে ইরানের রাজধানী তেহরান যান এবং প্রায় ৩ বছর সেখানে থাকার পর করাচিতে ফেরেন। পরবর্তীতে তিনি ইসলামাবাদ থেকে ভারতের ভিসা নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন।’
সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটিটিসির জঙ্গি কার্যক্রমবিরোধী অপারেশন চলমান থাকায় এবং নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের মুফতি হান্নানসহ একাধিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি গ্রেফতার হওয়ায় হরকাতুল জিহাদ সংগঠনটি নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে এসে ফখরুল ইসলাম জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নতুন সদস্য সংগ্রহ ও বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য সংগ্রহ, অর্থ সংগ্রহ করা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।’
সাংগঠনিক কার্যক্রম সশরীরে ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযাগমাধ্যম ব্যবহার করে অব্যাহত রাখত ফখরুল। তিনি অত্যাধুনিক এনক্রিপটেড আ্যপস ‘Bip’ ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রবাসীদের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য হুজি সদস্যদের সঙ্গে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক বিষয়ে আলোচনা করতেন। তিনি যেকোনো সময় বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলা পরিচালনার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনা করছিলেন।
সদস্যদের বান্দরবান পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছিল গ্রেফতারকৃতরা। ফখরুল ও তার ছেলে গ্রেফতার আসামি মো. সাইফুল ইসলাম অন্যান্য হুজি সদস্যদের নিয়ে একাধিকবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সদস্য সংগ্রহের উদ্দেশে এবং জিহাদী কার্যক্রমের অংশ হিসাবে মোটা অংকের টাকা অনুদান দিয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া অপর আসামি হাফেজ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এনক্রিপটেড আ্যপস ব্যবহার করে টেলিগ্রাম গ্রুপ ‘মোরা সত্যের সৈনিক’ এর অ্যাডমিন ‘অস্থায়ী মুসাফির’ হিসাবে ছদ্মনামে গ্রুপটি পরিচালনা করত।
নিষিদ্ধ ঘোষিত হুজির একটি এনক্রিপটেড আ্যপের প্রাইভেট চ্যানেল ‘একটু প্রস্তুতির’ কনটেন্ট হিসেবে ‘একটি বোমা তৈরি করো তোমার মায়ের রান্নার ঘরে’ শীর্ষক ১০ পাতার ডকুমেন্ট এবং একই চ্যানেল থেকে টাইম বোমা বানানো বাংলা বিবরণীসহ ভিডিও শেয়ার করে। আব্দুল্লাহ আল মামুন ওই এনক্রিপটেড আ্যপসের চ্যানেল থেকে পাওয়া কনটেন্ট তার সংগঠনের পরিচিত দু’একজনকে হাতেকলমে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ লাভের উদ্দেশে এবং বোমা বানানোর নির্দেশনা দিয়ে শেয়ার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা ‘টেলিগ্রাম’ গ্রুপের মাধ্যমে সক্রিয় থেকে উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করত। গ্রেফতারকৃতরা তাদের অন্যান্য সহযোগিরা পরস্পরের যোগসাজসে উগ্রবাদী ও আক্রমণাত্মক ভিডিও ও তথ্য শেয়ার এবং নিজেদের মধ্যে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে।
পলাতক অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও সিটিটিসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।