শরীয়তপুরে বাড়ির উঠান দখল করে সরকারি রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে এক বিধবার বাড়ির উঠান খুঁড়ে সরকারি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য দোলন হাওলাদারের ইন্ধনে জোরপূর্বকভাবে এই রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
ভুক্তভোগী আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘চার বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছেন। আমার দুই ছেলে প্রবাসী। এই সুযোগে অন্যের জমি বাঁচাতে গিয়ে আমার জমি দখলের পাঁয়তারা চলছে।’
আইনি সহায়তা চেয়ে মাকসুদা বেগম গত ৩ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা (পিটিশন নং ১৭/২০২৩) দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) কার্যালয় থেকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার ৭৯৫ টাকা। মহিষার ইউপি সদস্য ফারহানা নিপা (লিপি) এ কাজের প্রকল্প সভাপতি হলেও কাজটি দেখাশোনা করেন মহিষার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাওলাদারের অরুণের চাচাতো ভাই দোলন হাওলাদার।
স্থানীয় লোকজন জানান, বিধবার বাড়ির পাশ দিয়ে আগে রাস্তা ছিল। ওই অংশ দিয়েই সরকারি রাস্তা হওয়ার কথা। কিন্তু সেখান দিয়ে রাস্তা না নিয়ে কয়েকটি বাড়ির চলাচলের সুবিধার জন্য এবং ভোটের আশায় স্থানীয় ইউপি সদস্য বিধবার জমিতে নজর দিয়েছেন।
মাকসুদা বেগমের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তদন্তক্রমে ভেদরগঞ্জ থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক ভেদরগঞ্জ থানার এসআই সাইফুল সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি ঘটনার সত্যতা পান। বর্তমানে রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
বিধবা ফাতেমা জানান, তার দুই ছেলে এক ছেলে ঢাকা আরেক ছেলে দীর্ঘদিন প্রবাসী। সেই সুযোগে তাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী বাড়ির মমতাজ উদ্দিন আলীর ছেলে মো. আলমগীর ঢালী (৫২), মৃত সাদেক আলী হাওলাদের ছেলে ইউপি সদস্য দোলন হাওলাদার (৫০) ও মমতাজ উদ্দিন ঢালীর ছেলে মো. মোক্তার ঢালী (৪০) বাড়ির মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে চান।
ইউপি সদস্য দোলন হাওলাদার বলেন, ‘এ ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আপস নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে কেউ আসেনি। তারা ইউনিয়ন পরিষদে না এসে আমাদের নামে মামলা দিয়েছে।’
মহিষার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাওলাদার অরুণ বলেন, ‘সবার সঙ্গে আলোচনা করে বাড়ির ভেতর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোর করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়নি।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার বিষয়টি আমি শুনেছি। বাড়ির ওপর দিয়ে রাস্তা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিষয়টি আপস নিষ্পত্তির জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোনোভাবে কেউ বিশেষ ফায়দা নিতে পারবে না। আশা করি, ন্যায়সঙ্গত সমাধান হবে।’