ড. বদিউল আলম মজুমদার : সুশাসনের আলোকবর্তীকা হাতে এক প্রবাদ পুরুষ
মোহাম্মদ জারিফ কামরান অনন্তঃ বলিউড সুপারস্টার শাহরুখ খান অভিনীত একটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র “স্বদেশ “। এই চলচ্চিত্রে আমরা মোহন চরিত্রে অভিনয় করা শাহরুখ খানকে দেখতে পাই নাসার চাকরি এবং আমেরিকার বিলাসী জীবন ছেড়ে ভারতে তথা তাঁর স্বদেশে ফিরে আসে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে।
লেখার শুরুতেই বিদেশি চলচ্চিত্রের উদাহরণ টানার জন্য দুঃখিত। তবে আজ যার ব্যাপারে কথা বলবো তাঁর জীবনের গল্পের সাথে এ চলচ্চিত্রের কাহিনীর বেশ মিল আছে। স্বদেশ সারা ভারতব্যাপী সিনেমা হলে মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। আমি যদি বলি তারও প্রায় এক যুগ আগে এক বঙ্গ সন্তান ঠিক এভাবেই নাসার চাকরি ছেড়ে এসেছিল, আমেরিকার বিলাসী জীবন ত্যাগ করেছিল শুধুমাত্র নিজ মাতৃভূমিকে নতুন করে গড়ার লক্ষ্যে! স্বদেশ চলচ্চিত্রের কাহিনী পুরোটাই বানানো কিন্তু এই বঙ্গ সন্তানের ঘটনাটি বাস্তব। সেই বঙ্গ সন্তান আর কেউ নন আমাদের সবার প্রিয় বদিউল আলম মজুমদার স্যার।
১৯৪৬ সালের আজকের এই দিনে কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার পোলাইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বদিউল আলম মজুমদার স্যার। ১৯৬২ সালে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ষাটের দশকে শেষ দিকের গণআন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানিন্তন ইকবাল হলের (বর্তমানে জহুরুল হক হল) সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। ১৯৬৯-৭০ সালে তিনি ঢাকা বিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে রোটারি ফাউন্ডেশন গ্র্যাজুয়েট ফেলোশীপ ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং নিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার ক্যালিফোর্নিয়ার Calremont Graduate School থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করার পর Case Western Reverse University থেকে অর্থনীতিতে Ph.D ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটোল ইউনিভার্সিটি, ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি ও সেন্ট্রাল ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি-তে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এছাড়া তিনি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’-তেও কনসালটেন্ট ছিলেন৷ কিন্তু বিদেশের আয়েশি জীবন তাঁকে টানেনি। আর তাই তো ১৯৯১ সালে ড. বদিউল আলম মজুমদার দেশে ফিরে আসেন এবং ক্ষুধামুক্ত, আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ও ব্রত নিয়ে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর সাথে যুক্ত থেকে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশের বহুল পরিচিত একটি নাম।
তিনি প্রথম আলো-সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার একজন নিয়মিত কলাম লেখক। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে রাজনীতি ও প্রশাসন-সহ সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানান পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এছাড়া টেলিভিশন ‘টক শো’-তে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলাপ-আলোচনা করে থাকেন।
২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ড. মজুমদারকে ‘বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি’ (বার্ড)-এর বোর্ড অব গভর্নরস্ এর সদস্য করেন। একই বছর তিনি ড. এএমএম শওকত আলী’র নেতৃত্বে গঠিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান গতিশীল ও শক্তিশালীকরণ কমিটি’র একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। ড. বদিউল আলম মজুমদার বর্তমানে টিআইবি’র উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য, ডেনিশ গভর্ণমেন্ট ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে পরিচালিত ‘হাইসাওয়া ফান্ড কোম্পানি’র বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর সম্মানিত সদস্য।
স্যারের ব্যাপারে আসলে বলে শেষ করা যাবে না। তিনি একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও উন্নয়নকর্মী। কিন্তু এসব পরিচয় ছাপিয়ে তিনি আমাদের কাছে সবার প্রিয় ” স্যার “। তিনি আমাদের সেই সাহস ও অনুপ্রেরণার জায়গা যেখানে আমরা সপ্ন দেখি সুন্দর এক বাংলাদেশ গড়ার। দেশ গড়ার আত্ন প্রত্যয় বুকে ধারণ করে আমরা যারা তরুণ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছি তাদের সবার জন্য আলোকবর্তীকা হাতে যে ব্যক্তিটি পথ চিনিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি আর কেউ নন, আমাদের সবার প্রিয় বদিউল আলম মজুমদার স্যার।
আমাদের তারুণ্যের সমুদ্রে স্যার যে ঢেউ তুলেছেন তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকুক এই কামনাই করি। প্রিয় বদিউল আলম মজুমদার স্যার! আপনার র সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। আপনার আদর্শ এবং কর্মদক্ষতা দ্বারা দ্বীপ জ্বেলে যান প্রতিটি তরুণের হৃদয়ে, এই কামনাই করি৷