রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা গ্রেপ্তার, বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার

রূপগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও এলাকাবাসীর ওপর হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনার মূলহোতা শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা (৪৭) ও তার এক সহযোগী দেলোয়ার হোসেন (৫২) কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

পরে তাদের দেওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার (১ জুন) ভোরে রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়। এরআগে বুধবার রাতে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও তার পাশ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, হত্যা চেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।  
এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো গ্রেপ্তার হলেন মোশারফ। এর আগেও পাঁচ বার জেল খেটেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা, মাদক ও চাঁদাবাজিসহ ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধেও রূপগঞ্জ থানায় পাঁচের অধিক মামলা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলন তিনি বলেন, গত ২৫ মে রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা এবং গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনার পর রূপগঞ্জ থানার বাদী হয়ে মামলা করে পুলিশ। মামলার সূত্রধরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। 
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে রূপগঞ্জ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। মোশারফের নেতৃত্বে দলটির ৭০-৮০ জন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তাকে ভয় দেখানো হতো। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী দল গড়ে তুলেন মোশারফ। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর তিনি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে আত্মগোপনে চলে যান।

এক প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, মোশারফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তার কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তার পরিচয় তিনি সন্ত্রাসী।

জানাগেছে, গত ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া এলাকার চিনখলা গ্রামে মোশা বাহিনীর সঙ্গে গ্রামবাসীর দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।

এ সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপরও চড়াও হয় মোশা বাহিনী।

একপর্যায়ে পুলিশ মোশাকে গ্রেপ্তার করার পর তার সহযোগীরা হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ও গ্রামবাসীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।

তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত তিনজন। পরে অভিযান চালিয়ে ওই এলাকা থেকে মোশা বাহিনীর তিন নারী সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রামবাসী ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে শুক্রবার (২৬ মে) শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশাসহ তার বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে একটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর পক্ষে আরেকটি মামলা করা হয়।

সরকারি কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে মোশারফ হোসেন মোশা ও তার বাহিনীর ২৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করেন থানার এসআই আমিনুর রহমান।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- আবু মিয়া, জায়েদা খাতুন, মারুফা খাতুন, আলো, আনোয়ার হোসেন ধলকু, বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াত উল্লাহ, নীরব, স্বাধীন, নাজমুল, ওয়াসিম, রিফাত, রায়হান, দেলোয়ার, তাজেল, রুবেল, লিটন, আমির হামজা, জয়নাল, শাহাজালাল, নুর জাহান, সালেহা, আলী আজগর ও এমারত।

মামলার বাদী জানান, মোশারফ হোসেন মোশার হুকুমে ও নেতৃত্বে উল্লিখিত আসামিসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৭০-৮০ জন অস্ত্রসহ পুলিশের সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর অতর্কিত আক্রমণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

এ সময় আসামি আনোয়ার হোসেন ওরফে ধলকুর ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান, সাখাওয়াত উল্লাহর ছোড়া ইটপাটকেলে পুলিশ পরিদর্শক তন্ময় মণ্ডল, নীরবের ছোড়া ইটপাটকেলে এসআই অলিউল্লাহ, স্বাধীনের ছোড়া ইটপাটকেলে এসআই শহিদুল ইসলাম এবং আসামি নাজমুলের ইটপাটকেলে পুলিশ সদস্য আল-আমিনসহ কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় জানমাল রক্ষার্থে পুলিশ ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৩৪ মামলার আসামি মোশাকে প্রধান আসামি করে তার বাহিনীর ৩৭ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় ৬০-৭০ জনকে আসামি করে অপর মামলাটি করেন।

বাদীর অভিযোগ, পিস্তল, ককটেল, লোহার রড, চাপাতি, রামদা নিয়ে গ্রামবাসীকে ঘেরাও করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে মোশা বাহিনীর সদস্যরা। চাঁদার টাকা না পেয়ে গ্রামবাসীর ওপর তারা হামলা করে।

এই মামলার আসামিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন ধলকু, আলী আজগর ভূঁইয়া, বদিউজ্জামান বদি, সাখাওয়াত উল্লাহ, নীরব, স্বাধীন, নাজমুল, আব্বাস, ওয়াসীম, রিফাত, রায়হান, দেলোয়ার, অনিক, সূজন, তাজেল, রুবেল, লিটন, আমির হামজা ওরফে ভূট্টু, জয়নাল, কবির, শাহাজাদা, শিহাব, আরমান, কামাল, আলী, সোবহান, নূর ইসলাম, নিলু, এমারত, আমির মিয়া, তৃপ্তি, নাসরিন, আলম তারা, নূর জাহান ও চুমকী।

এবিষয়ে রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, মোশারফ হোসেন মোশা ও তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেনকে র‌্যাব সদস্যরা চার রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগজিন ও একটি পিস্তলসহ রূপগঞ্জ থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। এই ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা দেওয়া হয়েছে।

আসামী মোশারফ হোসেন মোশা ও তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেনকে সবগুলো মামলার রেফারেন্স উল্লেখ করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button