কবরে শুয়ে শাশুড়ির লাশ দাফনে পুত্রবধূর বাধা

সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা অমীমাংসিত রেখে মারা গেছেন শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম। তাই শাশুড়িকে দাফন করতে দেবেন না পুত্রবধূ শাহানাজ বেগম। শাশুড়ির দাফনের জন্য খোঁড়া কবরে নিজেই শুয়ে পড়েছেন। পরে পুলিশ এসে পুত্রবধূকে হেফাজতে নিয়ে তার শাশুড়ির দাফন সম্পন্ন করেছে। ঘটনা ঘটেছে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের লোহালিয়া গ্রামে। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে শাশুড়ির লাশ দাফন করা হয়।

আনোয়ারা বেগম (৮০) ওই এলাকার মৃত মোবারক আলী খানের স্ত্রী। মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়। তাদের সংসারে পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলে আব্দুর রহিম ২৫ বছর ধরে সৌদিপ্রবাসী। রহিমের স্ত্রী শাহনাজ বেগম ওই গ্রামেই থাকেন।

রহমতপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. শাহিন বলেন, ‌‘জমি ভাগ করে দেওয়ার আগে রহিম বিদেশ থেকে এসে মায়ের জায়গায় ঘর তুলেছেন। এতে বাধা দেন মা ও বোনেরা। বাধা না মানলে মা ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ওই জমি নিয়ে এখনও মামলা চলছে। এরই মধ্যে সোমবার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে আনোয়ারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় মেয়েদের কাছে অসিয়ত করেন তাকে ছেলের বাড়ির সামনের জমিতে দাফন করার জন্য।’

মেম্বার মো. শাহিন আরও বলেন, ‘পুলিশ আসার পর শাহনাজ দাবি করেন ওই জমি তার স্বামীর। তবে এর পক্ষে দলিল দেখাতে ব্যর্থ হন। অপর পক্ষে আনোয়ারার মেয়েরা তাদের পক্ষে সব দলিল দেখান পুলিশকে। এতে পুলিশ নিশ্চিত হন শাহনাজের স্বামী রহিম ওই জমি দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে বাড়ি তুলেছেন। মায়ের মামলার কারণে মাঝপথে বাড়ির তোলার কাজ বন্ধ করে দেন।’

রহমতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৃধা মো. আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে ছেলের জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই জমি রহিমের মায়ের। কিন্তু জোরপূর্বক ভোগ করতে চেয়েছিল রহিম। এ জন্য মা ও বোনেরা বাধা দিলেও তা মানেনি। ফলে মা রাগ করে ছেলের বাড়ির সামনে তাকে দাফন করার জন্য অসিয়ত করেন। সেই অসিয়ত মোতাবেক দাফন করতে গেলে রহিমের স্ত্রী বাধা দিয়ে কবরের ভেতর নেমে পড়েন। পরে পুলিশ এসে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আনোয়ারার দাফন সম্পন্ন হয়।’

শাহনাজকে মাটিচাপা দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে গ্রামবাসী মাটিচাপা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই পুলিশ এসে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছে।’

বাবুগঞ্জ থানার ওসি তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ‘শাশুড়ির জন্য কবর খোঁড়ার জায়গাটি পুত্রবধূ তার স্বামীর বলে দাবি করে কবর দিতে বাধা দেন। ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে সেখানে গিয়ে শাহনাজকে কবর থেকে তুলে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে জমির দলিল দেখাতে না পারায় সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে আনোয়ারার দাফন সম্পন্ন হয়। সেইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে শাহনাজকে সতর্ক করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button