বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন

বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন, ২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, চাকরি থেকে বরখাস্ত করাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধানও রাখা হয়েছে।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ আইনের খসড়া অনুমোদন করা হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এ বিষয়ে ব্রিফ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি জানান, বৈঠকে ভুয়া ডাক্তার ও ইঞ্জনিয়ারের সার্টিফিকেট (সনদ) নিয়ে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগে প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভুয়া সনদ নিয়ে যারা বিদেশে চাকরি করতে যায় তাদের এবং যারা এই সার্টিফিকেট দেয় তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের সংশোধিত খসড়া নিয়ে আলোচনার সময় ভুয়া সনদের বিষয়টি আসে। বৈঠকে এ (বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন) আইনের সংশোধিত খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে রিক্রুটিং এজেন্ট যারা আছেন তারা এখন থেকে সাব-এজেন্ট রাখতে পারবেন। এ ব্যবস্থা বর্তমানে থাকলেও তা আইনের মধ্যে নেই। এখন বিষয়টিকে আইনের আওতায় আনা হলো বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।

তিনি জানান, রিক্রুটিং এজেন্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’-এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২২ সালের ২৮ মার্চ আইনটি মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল। তার মতে, আগের এ আইনে বড় একটা গ্যাপ ছিল। কিছু ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান ছিল না। বিদ্রোহ কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট করে আইনের খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

মাহবুব হোসেন জানান, নতুন আনসার ব্যাটালিয়ন আইনে বিভিন্ন অপরাধের মধ্যে রয়েছে- সরকারি বা ব্যাটালিয়ন সদস্যের সম্পত্তি চুরি করা, যুক্তিসংগত কারণ বা কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে প্যারেডে অনুপস্থিত থাকা, কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা, দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করা। এক্ষেত্রে চাকরি থেকে বরখাস্ত, চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অপসারণের শাস্তির কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্রোহের জন্য শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড রয়েছে। আপিল করার ব্যবস্থা থাকবে। তাদের শাস্তি মওকুফের বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে তারা আবেদন করতে পারবেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিদ্রোহ সংগঠিত ও এতে প্ররোচনা প্রদান, বিদ্রোহের কারণ সৃষ্টি বা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বা এতে যোগদান করা, বিদ্রোহস্থলে উপস্থিত হয়ে তা দমনের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা গ্রহণ না করা, বিদ্রোহ সম্পর্কে জেনে বা ষড়যন্ত্রের কথা যুক্তিসঙ্গতভাবে জানা সত্ত্বেও সে বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানানো, কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যকে সরকারের প্রতি তার কর্তব্য ও আনুগত্য থেকে বিরত রাখা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিদ্রোহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়ন সদস্য বা আনসার ব্যাটালিয়ন বহির্ভুত কোনো ব্যক্তিকে অস্ত্র গোলাবারুদ বা দ্রব্য সামগ্রী দিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে সাহায্য করা, বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য যে কোনো অপরাধ সংগঠন করা- এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, আগের ১৯৯৫ সালের আইনে বিদ্রোহের এ সব বিষয় ছিল না। এছাড়া খসড়া আইনে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে দুটি আদালত রাখার বিধান রাখা হয়েছে। একটি হবে সংক্ষিপ্ত আনসার আদালত, আরেকটি হবে বিশেষ আনসার আদালত। সংক্ষিপ্ত আদালত একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালকের নেতৃত্বে হবে। গুরুতর অপরাধের জন্য হবে বিশেষ আদালত। এই আদালতের প্রধান হবেন মহাপরিচালক। এ দুটি আদালতে কি কি অপরাধের বিচার হবে সেই বর্ণনা খসড়া আইনে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button